গ্রাহক হয়রানির শীর্ষে সোনালী ও ব্র্যাক ব্যাংক
দেশের ব্যাংকগুলোতে গ্রাহক হয়রানিতে অভিযোগের তালিকায় শীর্ষে সোনালী ও ব্র্যাংক ব্যাংক। মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৫-১৬ প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংকিং খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আর্থিক অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে ৪ হাজার ৫৩০টি অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে অভিযোগের শীর্ষ ব্যাংকের তালিকায় উঠে এসেছে সরকারি ব্যাংক সোনালী। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে গ্রাহকরা ৫৬৩টি অভিযোগ করেছেন। দ্বিতীয় অবস্থানেই রয়েছে বেসরকারি ব্যাংক ব্র্যাংক। যার অভিযোগ সংখ্যা ৩৭৩।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আর্থিক অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে গ্রাহকরা ই-মেইল, ফ্যাক্স, ওয়েবসাইট ও ডাকযোগে অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে অগ্রণী ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে ২৯১টি অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (অভিযোগ ২৬৮), জনতা ব্যাংক (অভিযোগ ২৩১), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক (অভিযোগ ২০৪), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (অভিযোগ ১৮৪), পূবালী ব্যাংক (অভিযোগ ১৩২), রূপালী ব্যাংক (অভিযোগ ১৩১), ইস্টার্ন ব্যাংক (অভিযোগ ১২৬)।
ব্যাংকিং খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আর্থিক অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে ৪ হাজার ৫৩০টি অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। যার শতভাগ নিষ্পত্তি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গ্রাহকরা আর্থিক অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে টেলিফোনে ২ হাজার ৩৮৪টি এবং লিখিতভাবে ২ হাজার ১৪৬টি অর্থাৎ মোট ৪ হাজার ৫৩০টি অভিযোগ করেছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৬০০টি অভিযোগ বেশি। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গ্রাহকরা মোট ৩ হাজার ৯৩০টি অভিযোগ করেছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে, যা মোট অভিযোগের ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৪ দশমিক ৬৬ এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
প্রতিবেদন প্রকাশকালে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোর গ্রাহক সেবার গাইডলাইন যথেষ্ট নয়। একটি ব্যাংকে জনগণ বিশ্বাস করে টাকা জমা রাখে। ব্যাংকগুলোর বিশ্বাস করে গ্রাহকদের ঋণ দেয়। যদি কোনো কারণে গ্রাহক সেবা দিতে গিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ হয় তাহলে ব্যাংকগুলোর অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ব্যাংকের বড় কর্মকর্তাদের ট্রেনিং করিয়ে থাকি। কিন্তু মানসম্মত গ্রাহক সেবা দিতে হলে ব্যাংকের সামনের সারিতে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী বসেন তাদের ট্রেনিং, ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। গ্রাহকবান্ধব হওয়া যায় এমন প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাসুম কামাল ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক এ কে এম আমজাত হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম রহমানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এসআই/জেএইচ/জেআইএম