রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রবৃদ্ধি অর্জনে সংশয়


প্রকাশিত: ১১:৫৩ এএম, ২৬ মার্চ ২০১৫

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না। রাজনৈতিক অস্থিরতাই এর মূল কারণ। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা এমনই অভিমত দিয়েছেন। তারা আন্তজাতিক দাতা সংস্থাগুলোর দেওয়া পূর্ভাবাসের সঙ্গে একমত হয়ে এমনটি বলছেন। সরকার চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।   

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগোনিউজকে বলেন, চলতি অর্থবছরের নয় মাস প্রায় শেষ। কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়নি। বর্তমান যে পরিস্থিতি বাকি তিন মাসেরও তা অর্জন করা অসম্ভব।

তিনি বলেন, এ বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৯ থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। অর্থাৎ ৬ শতাংশের কাছাকাছি।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিদ্যুৎ-গ্যাসের স্বল্পতা ও অবকাঠামো সমস্যার কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে স্থবিরতা। ব্যক্তির আয়ও কমে এসেছে। এছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমদানি রফতানি বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে এখনো নেতিবাচক পরিবেশ বিরাজ করছে। সাবেক এ গভর্নর বলেন, দেশের অর্থনীতির গতি ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যবসা বান্ধব বিনিয়োগ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। আর এ জন্য দরকার দীর্ঘ মেয়াদী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনায় অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তার মতে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকলে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডায়ালগ (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, দেশের দীর্ঘদিন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যা এখনো অপরিবর্তনীয়।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। তাদের মতে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক এক শতাংশ হতে পারে।

সংস্থাটির `এশীয় ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৫` শীর্ষক প্রতিবেদনে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ পূর্বাভাস দিয়েছে। এর আগে দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক একই ধরনের পূর্বাভাস দেয়। দেশের অর্থনীতিবিদরাও প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে বলে সবার মত।

তাদের মতে, বছরের শুরুতে দেশের টানা অবরোধ-হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিরতায় কারণে থমকে গেছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। এমন অবস্থায় কৃষক পণ্যের যৌক্তিক দাম পাচ্ছেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবহন ব্যবসা। শিল্পপণ্য বাজারজাতকরণেও দেখা দিয়েছে জটিলতা। বিদ্যুৎ-গ্যাসের স্বল্পতা ও অবকাঠামো সমস্যার কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে স্থবিরতা। ব্যক্তির আয়ও কমে এসেছে। এসব কারণে রাজস্ব আদায়ে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব বলে মনে করছে দাতা সংস্থা ও অর্থনীতিবিদরা।

সর্বশেষ এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক এক শতাংশ হতে পারে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক দশমিক ২ শতাংশ কম। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি এলেও, জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অস্থিরতা তা আটকে দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ আইএমএফও প্রবৃদ্ধির এ হার আরও কমিয়ে তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ থেকে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা আইএমএফের প্রতিনিধি দলের প্রধান রড্রিগো কুবেরো প্রবৃদ্ধি কমার কারণ হিসেবে বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (অর্থাৎ গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর) অর্থনীতিতে এক ধরনের গতি ছিল। কিন্তু শেষ ছয় মাসে এসে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা থমকে গেছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত কয়েক বছর ৬ শতাংশের কাছাকাছি ঘুরপাক খাচ্ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। তবে রাজনৈতিক কিছুটা স্থিতিশীল থাকায় গত অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) ৭ দশমিক ২ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রবৃদ্ধি অর্জন হয় ৬ দশমিক ১২ শতাংশ।

এসআই/এসএ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।