সঞ্চয়পত্র কমাচ্ছে সরকারের ব্যাংকঋণ
সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ কমছে। শেষ ছয় মাসে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে কোনো ঋণ নেয়নি। উল্টো এ সময় ১১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা পূর্বের ঋণ পরিশোধ করেছে। সরকারের ব্যাংকঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় এ ভর্তুকি কম দিতে হচ্ছে। আমদানি ব্যয়ও কমে গেছে। ফলে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকঋণ নিতে হচ্ছে না সরকারের।
চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। আর ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেবে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারের পুঞ্জীভূত ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার ৫১৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা ছয় মাস আগে (গত জুন শেষে) ছিল এক লাখ ৮ হাজার ৬৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে সরকারের ব্যাংকঋণ কমেছে ১১ হাজার ১৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এদিকে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে সরকার। জুলাই-নভেম্বর প্রান্তিকে বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার ৩১৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। বাজেটে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সাবেক সভাপতি ও মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। বর্তমানে সরকারের তেমন ঘাটতি নেই। এর প্রধান কারণ বর্তমানে আমানতের সুদহার অনেক কম। তাই বিনিয়োগকারীরা এখন সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে না। এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় সরকারের ভর্তুকির পাশাপাশি আমদানি ও রফতানি খরচ কমে গেছে। তাই সরকার ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করছে।
এদিকে বিনিয়োগ মন্দার কারণে ব্যাংকগুলোতে জমছে অলস কাটার পাহাড়। এ সময় সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ না নেয়ায় ব্যাংকিং খাতে অলস টাকার পরিমাণ বেড়েই চলছে।
এসআই/বিএ/আরআইপি