স্প্রেড সীমা মানছে না ১৬ ব্যাংক


প্রকাশিত: ০৩:২৪ এএম, ০৩ জানুয়ারি ২০১৭

ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধানের (স্প্রেড) বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তা মানেনি দেশি-বিদেশি ১৬ ব্যাংক। আর এই সীমা লঙ্ঘনে দেশি ব্যাংকের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি ব্র্যাক ও ডাচ বাংলা ব্যাংক এবং বিদেশির মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।

গত নভেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কোনো ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না বলে নিয়ম আছে।

জানা গেছে, সুলভ বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নামানোর দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি অনুযায়ী ঋণের সুদহার কমাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর বিভিন্ন সময়ে চাপ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় সর্বশেষ ‘স্প্রেড’ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে যেসব ব্যাংকের স্প্রেড সীমা অতিক্রম করবে তাদের ক্যামেলস রেটিং নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে গত সেপ্টেম্বর মাসে নির্ধারিত সীমার বাইরে থাকা ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে স্প্রেড কমানোর দিকনির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনা অনুযায়ী- ১৪ ব্যাংককে ৩০ সেপ্টেম্বর, ৬ ব্যাংককে ৩০ অক্টোবর, একটি ব্যাংককে ৩০ নভেম্বর ও দুটি ব্যাংকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেয়া হয়।

তবে নভেম্বর পর্যন্ত হিসাবে ওই নির্দেশনা পালন করেনি অন্তত ১২টি ব্যাংক। কারণ ওই নির্দেশনা পরিপালন হলে নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র দুটি ব্যাংকের স্প্রেড নির্ধারিত সীমার বাইরে থাকার কথা। তবে সার্বিকভাবে আমানতের সুদের পাশাপাশি ঋণের সুদহার কমতে থাকায় ব্যাংকিং খাতে নভেম্বর শেষে গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে যা ছিল ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।

এদিকে, নভেম্বর মাসে প্রথমবার ঋণের গড় সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। এ মাসে ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। যা অক্টোবরে ছিল ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ। এ মাসে আমানতের গড় সুদ দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। যা অক্টোবর মাসে ছিল ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী- নভেম্বর মাসে ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ বাংলা, এবি, আইএফআইসি, উত্তরা, ইস্টার্ন, ওয়ান, প্রিমিয়ার, মেঘনা, ইউনিয়ন, এনআরবি, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, সিটি ব্যাংক এনএ, উরি ও এইচএসবিসি ব্যাংকের স্প্রেড নির্ধারিত সীমার উপরে রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ স্প্রেড রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের। ব্র্যাক ব্যাংকের স্প্রেড ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এছাড়া এবি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৮, আইএফআইসির ৫ দশমিক ৮৭, উত্তরার ৫ দশমিক ৬১, ইস্টার্নের ৫ দশমিক ১৫, ওয়ানে ৫ দশমিক ৪৩, প্রিমিয়ারে ৫ দশমিক ২৪, ইউনিয়নের ৫ দশমিক ৬৯, মেঘনার ৫ দশমিক ০৩, এনআরবি ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ।

বিদেশি উরি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৩৮, এইচএসবিসির ৬ দশমিক ২৫ এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও সিটি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ স্প্রেড রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান স্প্রেড সীমা ৫ শতাংশের নিচে আনতে বরাবরই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে গড় স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। কিছু ব্যাংক নির্ধারিত সীমার উপরে রয়েছে তাদের আমরা স্প্রেড হার নামিয়ে আনার তাগিদ দিয়ে আসছি। তবে এর আগে এই তালিকায় ২০টি ব্যাংক থাকলেও এবার ১৬ টিতে নেমে এসেছে। আসা করছি আগামীতে আরও কমে আসবে।  

এসআই/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।