রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব রফতানিতে
টানা হরতাল-অবরোধ আর রাজনৈতিক সহিংসতায় এবার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের রফতানি আয়ে। এক মাসের ব্যবধানে রফতানি আয় কমেছে ১৩ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি)সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ইমেজ সঙ্কট দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের রফতানি আয় কমছে। আগামীতে রফতানি আয় আরও কমবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, রফতানি আয়ে দেশের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্প। সহিংসতার আতঙ্কে এখন এ খাতের ক্রেতারা দেশে আসতে চাচ্ছে না। অর্ডার চলে যাচ্ছে প্রতিযোগী দেশগুলোতে। যার প্রভাব পড়ছে রফতানি আয়ে। চলমান এ অচলাবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে রফতানি খাত বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের রফতনি আয় হয়েছে ২৫১ কোটি ২০ লাখ ডলার। যা আগের মাস জানুয়ারির তুলনায় ৩৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ কম (টাকায় যার পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা)। জানুয়ারিতে রফতানি আয় হয়েছিল ২৮৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তবে এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গতবছর ফেব্রুয়ারিতে রফতানি আয় হয়েছিল ২৩৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রফতারি আয় হয়েছে দুই হাজার ৩১ কোটি (২০ দশমিক ৩১ বিলিয়ন) ডলার।
এ প্রসঙ্গে রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জাগোনিউজকে বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশ ইমেজ সঙ্কটের মুখে পড়েছে। যার কারণে খুব চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে দেশের রফতানি কারকরা।
তিনি আরো বলেন, গুণগত মান ধরে রাখা এবং সময়মতো পণ্য সরবরাহের পরও এই ইমেজ সংকট দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত পোশাক শিল্পকে তলানিতে নামিয়ে আনতে যাচ্ছে। তৈরি পোশাক শিল্পের একের পর এক অর্ডার বাতিল হচ্ছে। বিদেশি ক্রেতারা এখন প্রতিযোগীদেশ গুলোতে চলে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় শুধু পোশাক খাতেই নয়, প্রভাব পড়েছে অন্যান্য খাতেও।
সালাম মুর্শেদী বলেন, দুই মাস যে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে এর প্রভাব এখন চোখে পরবে না। এর প্রভাব পরবে মে-জুনে। আর রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের রফতানি আয়ে।
এদিকে বিজিএমইএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক ৮০ শতাংশ ক্রেতাই এ দেশ ভ্রমণ থেকে বিরত রয়েছেন। অর্ডার নিতে উদ্যোক্তাদের নিজ দেশে বা অন্য কোন দেশে যেতে হয়েছে বৈঠক করতে। এতে অনেকে ছাড় দিয়ে অর্ডার পেয়েছেন সামান্য, কাউকে আবার ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখতের বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের সহিংসতায় রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছিল তার প্রভাব কিন্তু এখন আমরা দেখছি। গত অর্থবছর যেখানে ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এখন সেটা ৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, দেশে যে অচলাবস্থা চলছে তা দ্রুত নিরসণ না হলে ভবিষ্যতে আমাদের রফতানি খাত বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়বে। এখন যে অস্থিরতা-সংঘাত চলছে তার প্রভাব পড়বে ছয় মাস-এক বছর পর।
এসআই/আরএস/পিআর