আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুশাসনের নির্দেশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, আর্থিক খাতে সুশাসনের সার্বিক উন্নয়ন ঘটলেও সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের মধ্যে বিধি-বিধান ও নীতিমালা লঙ্ঘনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে, পরিচালকদের অনুকূলে নামে-বেনামে সীমাতিরিক্ত ঋণ প্রদান, এসব ঋণের অর্থ ভিন্ন খাতে ব্যবহার, বিরূপ শ্রেণীকৃত ঋণকে অশ্রেণীকৃত হিসেবে প্রদর্শন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিচালক নন এমন ব্যক্তি কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাক্তন পরিচালক বা ঋণগ্রহীতা পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থিত থেকে নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের মতো গুরুতর অনিয়ম ধরা পড়েছে। এসব অনিয়মের সঙ্গে প্রধান নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জড়িত থাকার বিষয়টিও তদন্তে উদ্ঘাটিত হয়েছে যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংক কনফারেন্স হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, এ ধরনের অনিয়ম যাতে আর না ঘটে সেজন্যে পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে আপনাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যতে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অনিয়ম ধরা পড়লে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর ২৬ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীদের আমানত ঝুঁকিমুক্ত রাখা বা জনস্বার্থে উক্ত প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পিছপা হবে না।
আতিউর বলেন, অনিয়মের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের একজন চেয়ারম্যান, কয়েকজন পরিচালক এবং একজন প্রধান নির্বাহীকে অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় কয়েকজন প্রধান নির্বাহীকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ৪১ ধারার আওতায় ব্যক্তিগতভাবে দোষারোপ করা হয়েছে। একটি বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আগের সভায় কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গুরুতর অনিয়মের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ উল্লেখপূর্বক এ ধরনের অনিয়ম বিষয়ে আপনাদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হলেও আমাদের ভিজিল্যান্স সেলের তদন্ত কার্যক্রমে দেখা গেছে, এখনো কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথ্য গোপন করে নানা ধরনের অনিয়ম করে যাচ্ছে। এ ধরনের কিছু অনিয়মের তদন্ত কাজ এখন প্রক্রিয়াধীন আছে। তদন্তে কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখাবে।
পর্ষদ সভায় অনুপস্থিত পরিচালককে সভায় উপস্থিতি দেখিয়ে সম্মানী প্রদান, গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা না থাকা সত্ত্বেও ঘন ঘন নির্বাহী কমিটির সভা আয়োজন, অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বোর্ড রুমের পরিবর্তে অন্য স্থানে পর্ষদ সভা অনুষ্ঠানের নজির আমাদের নজরে এসেছে। এসব অনিয়মের বিষয়েও আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাই এসব বিষয়ে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং পর্ষদকে অবহিত রাখতে হবে, বলেন আতিউর।
তিনি বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণে আরো ধরা পড়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের ন্যায় বিভিন্ন প্রচলিত খাতে ঋণ প্রদান করছে। এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠনের মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে পড়ে না।
# আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কঠোর নির্দেশনা যাচ্ছে
এসএ/বিএ/পিআর