রূপপুর প্রকল্পে ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা


প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৬

পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মূল কাজ শুরু হচ্ছে। এজন্য ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পে রাশিয়া দেবে ৯১ হাজার কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। চলতি বছর থেকে ২০২৫ সাল নাগাদ ৯ বছরে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ।

প্রকল্পের জন্য রাশিয়া থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিচ্ছে সরকার। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের বিপরীতে এক দশমিক ৭৫ শতাংশের সঙ্গে ৪ শতাংশ লাইবর যোগ করে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। ঋণের অর্থ ২০ বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হবে, যার মধ্যে ১০ বছর গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে।

জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। রাশিয়ার এ প্রতিষ্ঠানটি ১২০০ করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য জিয়াউল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভুক্ত, যা ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে স্থান পেয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সরকার বিদ্যুৎ খাতের সাফল্যকে আরও উজ্জ্বল করবে। গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্পটি আগামী একনেকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।

এর আগে ২০১৩ সালে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ অনুমোদন করা হয়। যার আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নকশা, যন্ত্রাংশ সরবরাহ, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, উৎপাদন, নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি, পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ, বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত যন্ত্রাংশ পরিবহন এবং গ্যারান্টি পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করা হয়। এ নিয়ে ওই সময় রাশিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে ১৩ দফা আলোচনার ভিত্তিতে ৪৭টি অনুচ্ছেদ এবং ৫৭৩টি উপ-অনুচ্ছেদের একটি চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়।

ruppur

চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টি করবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে।

আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের বিস্তারিত ডিজাইন, প্রশিক্ষণ, সরঞ্জামাদি সংগ্রহ, এলটিএমই সংগ্রহ, দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ ও স্থাপন, পারমাণবিক জ্বালানি সংগ্রহ, কমিশনিং ও টেস্টিং সম্পন্ন হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে পরমাণু কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়ার পর ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে বেছে নেয়া হয় রূপপুরকে। পরবর্তীতে রূপপুর নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও কার্যক্রম আর এগোয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ৫০ বছর আগের নেয়া উদ্যোগটি সক্রিয় করে তোলা হয়। দ্রুত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে সংসদে প্রস্তাব পাস করে গঠন করা হয় একটি জাতীয় কমিটি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের আগস্টে পাবনার রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন করতে সংসদে বিল পাস হয়।

আইন অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের হাতে। আর কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ’।

এমএ/ওআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।