সরকারের আর্থিক চাপ বাড়ছে
দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটে বড় ক্ষতিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাপ বাড়াবেন সরকারের ওপরে। একইভাবে চাপে পড়তে হবে ব্যাংক খাতকেও।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবহন মালিকদের আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। অন্যদিকে, আইন শৃঙ্খলা মোকাবেলা করতে চলতি বাজেট থেকে অতিরিক্ত বরাদ্ধ দিতে হচ্ছে সরকারকে।
তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতি হালনাগাদ দিয়ে ক্ষতির সহায়তা চেয়ে দেখা করতে যাবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে।
এদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানও অনুষ্ঠানে বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া হবে। ব্যবসায়ীরা কর ছাড় চাচ্ছেন পরিস্থিতির কারণে।
অন্যদিকে এনবিআর তার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা থেকেও পিছিয়ে পড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলমান পরিস্থিতির কারণেই এটি হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা থেকে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩শ কোটি টাকা।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি মোকাবেলা করতে নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা আদায়ের জন্য ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলোর ওপর ব্যবসায়ীদের চাপ বাড়ছে। তারা ক্ষতি মোকাবেলায় ঋণের সুদ মওকুফ, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো, সংকটের সমাধানের আগে সব ধরনের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করা, সুদের হার কমানো, স্বল্পমেয়াদি ঋণ দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করা, বীমার প্রিমিয়াম কমানোর সুপারিশ করেছেন। এর বাইরে রফতানিকারকদের জন্য কারেন্সি বা মুদ্রা বিনিময় হারের সুবিধা, বন্দর অবকাঠামোর চার্জ কমানোর দাবি করছেন।
ইতোমধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যে ধরনের সুবিধা দেয়া দরকার তা চুড়ান্ত করেছে।
সাধারণত, ব্যাংকের ঋণের সুদ তিন মাস পরপর পরিশোধ করতে হয়। এখন তারা তিন মাস করে ছয় মাসের সুদ পরিশোধ স্থগিত রাখবে।
এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীদের ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে বিশেষ ছাড় দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকার বেশি বড় অংকের ঋণ গ্রহীতাদের এ সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এর আওতায় সুবিধা পেতে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে আবেদন করা যাবে। ফলে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা এই সুবিধা নিতে আবেদন করতে পারবেন।
এদিকে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় কৃষকরাও ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তাদের কৃষি ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে দেয়া এফবিসিসিআইর তথ্য অনুসারে প্রতিদিনের হরতাল-অবরোধে অর্থনীতিতে ক্ষতি হচ্ছে ২ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। এ হিসেবে ওই সময় পর্যন্ত এফবিসিসিআইর দেয়া তথ্য অনুসারে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে গার্মেন্টস খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন খাতে ১২ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা, খুচরা ও পাইকারি বিক্রিতে ২০ হাজার কোটি টাকা, আবাসন খাতে ১০ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা, কৃষি ও পোলট্রি খাতে ১২ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা, পর্যটন খাতে ৯ হাজার কোটি টাকা এবং উৎপাদন খাতে ৫ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী তার তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবহন মালিকদের অনুদান হিসেবে শতকোটি টাকার বেশি দিয়েছেন। আর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি পাইপ লাইনে রয়েছে। এনিয়ে কাজ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে, পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ গঠিত ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত ‘ব্যাংক ও ট্যাক্স’ কমিটির প্রধান বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জাগোনিউজকে বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে আমরা কয়েকটি বিষয়ে দাবি জানাবো।
এসএ/বিএ/আরআই