পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা


প্রকাশিত: ০২:৩২ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে রফতানির লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন মৃত্যুপূরী। এ কারণে শতভাগ রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও তৈরি পোশাক ঠিক সময়ে বন্দরে পৌঁছানো যাচ্ছে না। এতে ব্যহত হচ্ছে পোশাক শিল্পের নিয়মিত কার্যক্রম। ফলে কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন জটিলতা। আর এ সুযোগে তৎপর হয়ে উঠেছে স্বার্থেন্বেসী মহল। তাই দেশের সব থেকে শ্রমঘন শিল্প পোশাক শিল্পে যে কোন সময় দেখা দিতে পারে শ্রমিক অসন্তোষ।

এ খাতের উদ্যোক্তারা জানান, চলমান সহিংতার কারণে তৈরি পণ্য সময়মতো রফতানির উদ্দেশ্যে বন্দরে পাঠানো যাচ্ছে না। কাঁচামালও কারখানায় আনা যাচ্ছে না সময়মতো। ফলে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। টানা হরতাল ও অবরোধে এ পর্যন্ত পোশাক শিল্পের ক্ষতি হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অপরদিকে, ব্যাংক ঋণ থাকায় তা সময়মত পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর ফলে ব্যপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে গোটা শিল্প। আর আর্থিক সঙ্কটের কারণে শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। ফলে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।



তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জানান, এভাবে দেশ চলতে পারে না। আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণও রয়েছে। অথচ চলমান সহিংসতায় আমাদের গোটা বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে এমন সহিংস পরিস্থিতিতে শুধু পোশাক শিল্প নয় হুমকির মুখে পড়েছে গোটা অর্থনীতি। এভাবে চললে শ্রমিকদের বেতন ভাতাসহ নিয়মিত ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হয়ে পড়বে। এতে করে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই সময়ে পোশাক শিল্পে বিদেশী ক্রেতারা ক্রয় আদেশ দেন। কিন্তু চলমান সহিংতার কারণে অনেক ক্রেতা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। আর নতুন করে কেউ আসছে না। এভাবে চললে দেশের সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান করা এই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।

শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, অস্থিরতার কারণে পোশাক কারখানাগুলোতে এখন কাজ কমে গেছে। বহু কারখানায় ওভারটাইম কমে গেছে। কোনো কোনো কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইও শুরু হয়েছে। গত এক মাসের অস্থিরতার কারণে প্রায় ২০০ কারখানা বিপাকে পড়ে বন্ধের উপক্রম হয়েছে। অতীতে ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা জোট বেঁধে আন্দোলন করেছে। তাই সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার।  

বিজিএমইএ’র বর্তমান সভাপতি আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ব্যবসায়ীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা বার বার এই সঙ্কট সমাধানের দাবি জানিয়েছি। গত বছর আর্ন্তজাতিক বাজারে বাংলাদেশের ইমেজ পূণরুদ্ধারে আমরা ব্যপক কাজ করেছিলাম। আর তার সুফল পাওয়া শুরু হয়েছিলো। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই এই সহিংসতা আমাদের সব অর্জনকে ভুলন্ঠিত করেছে। এখন ক্রেতারা আর আসতে চাচ্ছে না।



তিনি বলেন, শ্রমঘন এই শিল্পের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হলে সব থেকে বেশি ক্ষতি হবে শ্রমিকদের। তারা কর্মহীন হয়ে পড়লে নানা ধরনের অসামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। তখন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবে। পোশাক শিল্প ঘিরে দেশে নতুন নতুন ব্যকলিঙ্ক শিল্পের প্রসার ঘটছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেই সব শিল্পও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ সম্পর্কে বিজিএমইএ’র দ্বিতীয় সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচি জানান, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশের তৈরি পোশাক শিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে পোশাক রফতানি কমে যাচ্ছে অর্ডার। তিনি বলেন, এভাবে চলতে পারে না। আমরা ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে চাই। আমরা এমন জালাও-পোড়াও চাই না।

পোশাক মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে চলমান অস্থিতিশীল রাজনীতির কারণে কারখানা মালিকরা তাদের পণ্য পরিবহনসহ নানা সমস্যার মধ্যে পড়ছে। শ্রমিকদের তৈরি করা পোশাক সময়মতো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে অনেক কারখানায় শ্রমিকদের জানুয়ারি মাসের মজুরি পরিশোধে সংশয় তৈরি হয়েছে।

এসআই/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।