নতুন ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩৯৩ কোটি টাকা
রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া নতুন ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণের নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় বাড়ছে মন্দ ঋণের (খেলাপি ঋণ) পরিমাণ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৯৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করা হলেও টনক নড়ছে না ব্যাংকগুলোর।
খেলাপি ঋণের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা (এপ্রিল-জুন’২০১৬) সর্বশেষ প্রতিবেদনে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত নতুন ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে মোট ৩৯৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর আগে মার্চের শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সেই হিসেবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
তথ্য অনুযায়ী, নতুন ৯টি ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর নেতৃত্বাধীন ফারমার্স ব্যাংকের ২২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ব্যাংকটির দায়িত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফরাছত আলী।
এছাড়াও খেলাপি ঋণের তালিকায় অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে, মেঘনা ব্যাংকের ১৭ কোটি ৪৪ লাখ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১৩ কোটি ৯৯ লাখ, মধুমতি ব্যাংকের ১৪ কোটি ৭৭ লাখ, এনআরবি ব্যাংকের ১৮ কোটি ৩৬ লাখ, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ১৭ কোটি ৫ লাখ, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ২ কোটি ৩০ লাখ ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, নতুন ব্যাংকগুলো পরিচালন ও ব্যবস্থাপনার দুর্ভলতা রয়েছে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন যাচাই-বাছাই করতে পারছে না। তাছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর নানা অব্যবস্থাপনা অনিয়মের কারণে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংকগুলো কি করবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা নেই। তারা নতুন কোনো পণ্য বাজারে এখনো নিয়ে আসেনি। গ্রাম পর্যায়ে শাখা করার কথা থাকলেও তেমন আগ্রহ নেই ব্যাংকগুলো। এছাড়া তাদের কোনো সৃজনশীলতাও নেই। পুরনো ব্যাংকগুলোর মতই আমানত সংগ্রহ করে ঋণ প্রদান করছে। তাই নতুন ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন কার্যক্রমের উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার জন্য নীতিমালা করা আছে, ব্যাংকগুলো তা মেনে চলবে এটা আমরা আশা করি। নতুন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমানো জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যেন পরিচালনা পর্ষদ হস্তক্ষেপ না করে সেই বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
খেলাপি ঋণ সম্পর্কে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ নূরুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনক বিষয়। তবে এটি চলমান প্রক্রিয়া। নতুন ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়েছে। তা মাত্রা তুলনায় খুবই সামান্য। আর আমাদের মেঘনা ব্যাংকের যে খেলাপি ঋণ রয়েছে তা আগামী ডিসেম্বর নাগাদ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়। তার বিপরীতে নতুন ব্যাংকের জন্য ৩৭টি আবেদন জমা পড়ে। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ২০১২ সালের শুরুতে দুই দফায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের তিনটি ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য ছয়টি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের বিভিন্ন সময়ে নতুন নয়টি ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে।
এসআই/জেএইচ/আরআইপি