স্বর্ণালংকার ব্যবসায় ধ্বস

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ধ্বস নেমেছে স্বর্ণালংকার ব্যবসায়। শীতকাল বিয়ের ভরা মৌসুম চললেও বাজারে স্বর্ণালংকার কেনার ক্রেতা নেই। অথচ অন্যান্য বছর এ সময়ে গয়না কেনার জন্য দোকানে ভিড় থাকে। দোকানিরা বিয়ের গয়নার চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু এখন উল্টো চিত্র। ভয়াবহ মন্দা চলছে স্বর্ণাংকার ব্যবসায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লাগাতার হরতাল-অবরোধে অধিকাংশ স্বর্ণের দোকানই বন্ধ। কিছু বড় মার্কেট বা শপিং মল খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই। গত এক মাস ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে বিয়ের অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ আছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিয়ের অনুষ্ঠানই যদি না হয় তাহলে গহনা বিক্রি হবে কিভাবে?
ভরা মৌসুমে রাজধানীতে গয়না বিক্রি কমেছে আগের চেয়ে কমপক্ষে ৭৫ ভাগ। বলতে গেলে- অস্থিরতায় রাজধানীর দেড় হাজার গয়না ব্যবসায়ীর মাথায় হাত। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন গয়নার কারিগর, শ্রমিক-কর্মচারীসহ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় ৬ লাখ মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত গয়না ব্যবসায়ীদের মৌসুম। এ চার মাস ব্যবসা করে বাকি সময় তেমন ব্যবসা থাকে না। কিন্তু এবারের টানা অবরোধে ব্যবসা করতে না পরায় বেকায়দায় পড়েছেন অনেক গয়না ব্যবসায়ী।
জানা গেছে, দেশে স্বর্ণের চাহিদার পুরোটাই মেটানো হয়ে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে। ফলে স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণ হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। গত কয়েক বছর থেকে স্বার্ণের বাজার অস্থিরতার মধ্যে যাচ্ছে। একবার কমছে তো আরেকবার বাড়ছে। তবে স্বর্ণের দাম এখন আর সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষতার মধ্যে নেই। যে পরিমাণ দাম কমছে তা বিগত সময়ে যে দাম বেড়েছে তার তুলনায় নগণ্য।
গয়না ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দামের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে স্বর্ণের দাম বিগত এক দশকে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। ফলে অন্তত বিয়ে-শাদী করতে গেলে এখনও গয়না কিনতে চান অনেকে। তবে অর্থনৈতিক মন্দা, ঘন ঘন হরতাল-অবরোধ আর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণ ব্যবসা এখন জৌলুস হারাতে বসেছে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী রয়েছেন প্রায় ১৫শ’। কারিগর, বিক্রেতা আর অন্যান্য কর্মচারী মিলিয়ে এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন কমপক্ষে ৬ লাখ মানুষ। কিন্তু টানা অবরোধ আর হরতালে বলতে গেলে অলস সময় কাটাচ্ছেন কারিগররা।
এ প্রসঙ্গে সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামূল হক খান বলেন, অবরোধ আমাদের জন্য সর্বনাশ ডেকে এনেছে। আমাদের বিক্রি অন্য সময়ের চেয়ে সিকিভাগও নেই। কারিগররা অলস সময় পার করছেন। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাতে সমাধান করা উচিত। ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করে রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এএইচ/আরআইপি