প্রায় হাজার কোটি টাকার ক্ষতিতে চামড়া শিল্প


প্রকাশিত: ০৪:১৬ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ আর বিচ্ছিন্ন হরতালেসহ গত ৩০ দিনে দেশের চামড়া শিল্পে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া চলমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শতভাগ রপ্তানিমুখী এই শিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ)।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টস ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতির এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হরতাল-অবরোধ আর রাজনৈতিক সহিংসতায় রফতানি জানুয়ারিতে কমেছে ১২৮ কোটি টাকা, মূল্য হ্রাস পেয়েছে ৫০০ কোটি টাকা, সঠিক সময়ে সরবারহ না করতে পারায় গুণগত মান নষ্ট হয়েছে ১০০ কোটি টাকা, কেমিক্যাল বন্দরে আটকে থাকায় ক্ষতি ২০ কোটি টাকা, পরিবহন ভাড়া বেড়েছে ১৫ কোটি টাকা সঠিক সময়ে পণ্য না পাঠাতে পারায় ৩৪ কোটি টাকা, এয়ার চার্জ ৪৫ কোটি টাকা, ব্যাংক সুদ ৬৫ কোটি টাকা এবং শ্রমিক কর্মচারীর বেতন বাবদ ক্ষতি ৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলমান সহিংসতার কারণে ক্ষতি হয়েছে মোট ৯৬৯ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিটিএ’র সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি বলেন, গত ২০১৩ সালের কোরবানির মৌসুমে ৬০০ কোটি টাকার পাকা চামড়া এখনো অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। এরপর গত ২০১৪ সালের কোরবানির সময়ে সংগৃহিত কাচা চামড়ার প্রায় ৬০ ভাগ কারখানায় এসে পৌছেছে। বাকি ৪০ ভাগ কাচা চামড়া এখনো বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে আমরা সংগৃহিত চামড়া ঢাকায় আনতে পারছি না। এর ফলে চামড়ার গুনগত মান ও স্থায়ীত্ব নষ্ট হচ্ছে।

শাহীন আহমেদ বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতায় দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় ট্যানারি শিল্প ও প্রক্রিয়াজাত চামড়া পরিবহনে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। আবার চামড়া রপ্তানির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি ভাড়া তিন গুণ বাড়িয়েছে। পণ্য পাঠাতে হচ্ছে বিমানে। বাতিল হচ্ছে ক্রয় আদেশ। নানা কারণে বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ক্রেতারা চামড়া কিনতে অনিহা প্রকাশ করছেন। এর ফলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার চামড়া মজুদ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চলমান অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে হুমকির মুখে পড়বে গোটা চামড়া শিল্প।

তিনি আরো বলেন, চলতি অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১৩৯ কোটি ডলার আয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম সাত মাসে ৭৭ কোটি ডলার রপ্তানি লক্ষমাত্রা নির্ধারিত ছিলো। কিন্তু রপ্তানি হয়েছে ৬৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত সাত মাসে এ খাতে রপ্তানি লক্ষমাত্রার চেয়ে ১০ কোটি ডলার কম রপ্তানি হয়েছে। শুধুমাত্র জানুয়ারিতেই রপ্তানি কমেছে ১২৮ কোটি টাকা।

এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। শাহিন আহমেদ বলেন, হাজারিবাগ থেকে ট্যানারিসমূহ সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানন্তরের জন্য আমরা ১১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলাম। কিন্তু সরকার মাত্র ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ মঞ্জুর করেছে। এটা আরো বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি। চলমনা পরিস্থিতিতে চামড়া শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা সরকারের কাছে ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়ার উপর নগদ ১০ শতাংশ সহায়তা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ সময় সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে কারখানা স্থানান্তরের জন্য সিঙ্গেল ডিজিটে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়া ও  সাভারে চামড়া শিল্প স্থানন্তর হলে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ দেয়ার সুযোগ চান তিনি।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে সংলাপের মাধ্যেমে সমাধানের দাবি জানায় বিটিএ।

এসআই/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।