প্লাস্টিক পণ্যে বিপ্লবে বাংলাদেশ


প্রকাশিত: ১১:৫৭ এএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

প্লাস্টিক পণ্যে বিল্পব দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে আজ রপ্তানি হচ্ছে পৃথিবীর অনেক দেশেই। হাজার কোটি টাকা রপ্তানী আয় আসছে এ খাত থেকে। রপ্তানিতে প্লাস্টিক শিল্প খাতের অবস্থান ১২তম। অথচ এক সময়কার আমদানি নির্ভর এইসব পণ্যের প্রায় সবই এখন দেশে তৈরি হচ্ছে।

এ খাতের ব্যবসায়িরা বলছে, সরকারের নীতি সহায়তা পেলে ২০২১ সালের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করে ৮ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে। দেশের প্লাস্টিক জগতের বিশ্বস্ত নাম আরএফএলসহ অনেক কোম্পানীই আজ বিশ্বে প্লাস্টিক পণ্যের আস্থার নাম।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৫ হাজার ছোট-বড় প্লাস্টিক কোম্পানী রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ভাবে ২০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপনন হচ্ছে। সরাসরি রপ্তানী আয় বর্তমানে হাজার কোটি টাকা। ১২ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে।  

জানতে চাইলে এই খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য উৎপাদন ও রপ্তানীকারক এসোসিয়েশন-বিপিজিএমইএ এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জাগোনিউজকে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী উদ্যোক্তারা মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করায় প্রতি বছরই রপ্তানির আয়ের পরিমাণ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ পৃথিবীর সব দেশেই কম বেশি যাচ্ছে আমাদের দেশীয় পণ্য। তবে বড় বাজার হতে পারে ভারত ও চীন।

বিপিজিএমইএ সূত্র জানায়, সার্কভুক্ত দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকপণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ি, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করে ২০১০-১১ অর্থবছরে ৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলার আয় হয়। ২০১১-১২ অর্থ বছরে এই আয় ছিল ৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। সর্বশেষ বিদায়ি অর্থ বছরে আয় হয়েছে ৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশেও ব্যাপক বাজার তৈরি হচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। ঢাকায় মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ১৪ কেজি। আর জাতীয় ভাবে ৭ কেজি।

তবে এ ব্যাপারে জসিম উদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক পণ্যেও ব্যবহার মাথাপিছু শত কেজি। সিঙ্গাপুরে ১৩০ কেজি। আমাদের দেশেও চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

তাই আগামী দিনে রপ্তানি বাড়াতে ও এ খাতের উন্নয়নে একটি আলাদা শিল্প নগরি করা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। এ খাতের ব্যবসায়িদের নগদ সহায়তাও দেওয়া যেতে পারে। বিশ্বের প্রতিযোগিতা বাজারে টিকতে নূন্যতম ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হতে পারে।

জসিম উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক শিল্পের বিকাশে এ খাতে কর অবকাশ সুবিধা দিতে পারে সরকার।

বিপিজিএমইএর সভাপতি আরো বলেন, সরকারের অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতের মতো এ খাতটিতেও নজর দেয়া উচিত। নীতি সমর্থন ও নগদ সহায়তা দিলে এই খাতটি দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

ব্যবসায়িরা বলছেন, গত ৭/৮ বছরে আমদানি নেমে এসেছে শূন্যের কোটায়। ফলে দেশের চাহিদা এখন দেশের উৎপাদকরাই মেটাচ্ছেন।   

সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কারখানাগুলোতে ১৫টি ক্যাটাগরিতে পণ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে পোশাক খাতের জন্য পলি ব্যাগ, হ্যাঙ্গার, প্লাস্টিক ক্লিপ, বোতাম; খেলনা সামগ্রীর মধ্যে পুতুল, বল, ইয়োইয়ো; গৃহে ব্যবহারের জন্য চেয়ার, টেবিল, ডাইনিং কেবিল, বিভিন্ন ধরনের রেক, ঝুড়ি, বাথটাব, জগ, মগ, ঝুড়ি, অফিসে ব্যবহারের জন্য পেপারওয়েট, স্কেল, টেবিল, বলপেন, ফাইল কভার ইত্যাদি অন্যতম।

কৃষি খাতের জন্য পাইপ, সাইকেলের যন্ত্রাংশের মধ্যে বাম্পার, হাতলের কভার, ব্যাক লাইট, স্পোক লাইট; মাছ ও ডিম রাখার ঝুড়ি; ভিডিও ও অডিও ক্যাসেট, কম্পিউটারের উপকরণসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরি হচ্ছে দেশেই।

মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে প্লাস্টিক মেলা
এদিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে প্লাস্টিক মেলা। চারদিন ব্যাপী মেলা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। প্রতিদিন ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিনা টিকেটে ঘুরে আসতে পারবেন দর্শনার্থীরা।

এসএ/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।