রেমিটেন্স আহরণে ধ্বস


প্রকাশিত: ০৪:৫০ পিএম, ০৫ জানুয়ারি ২০১৫

বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের প্রধান যোগান প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স ধারাবাহিক ভাবে কমছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে বছরের হিসাবে ২০১৩ সালে প্রথমবারের মত রেমিটেন্স প্রবাহ কমে। এরপর থেকেই পতনে ধারা অব্যাহত আছে। দুই বছরের ব্যবধানে রেমিটেন্স কমেছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।   

এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি কমছে, অন্যদিকে প্রতি বছরই শ্রমিকদের একটি অংশ ফেরত আসছে। তাছাড়া বিদেশগামী দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। এসব কারণে রেমিটেন্স নেতিবাচক ধারা চলছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০১৪ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৩৭১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন।

২০১৩ সালে পাঠিয়েছেন এক হাজার ৩৮৩ কোটি ৮০ লাখ (১৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন) ডলার। এর আগে ২০১২ সালে প্রবাসীরা এক হাজার ৪১৭ কোটি ৬৫ লাখ (১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন।

সেই হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে ২০১৩ সালে রেমিটেন্স কমেছে ৩৩ কোটি ডলার (টাকার অংকে যার পরিমাণ আড়া্য় হাজার কোটি টাকার বেশি) এবং ২০১৪ সালে কমেছে ১৩ কোটি ডলার (এক হাজার কোটি টাকা)। আর গত দুই বছরের ব্যবধারে টাকার অংকে রেমিটেন্স কমেছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার।  

অর্থাৎ শতকরা হিসাবে ২০১২ সাল থেকে ২০১৩ সালে রেমিটেন্স কমেছে ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সালে শতকরা হিসাবে রেমিটেন্স কমেছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।

রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানিতে এক বছরে তেমন কোন উন্নতি হয়নি। এক বছর শুধু নয় গত চার পাঁচ বছর ধরেই এই খাতে নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। ফলে রেমিটেন্স কমেছে। এজন্য তিনি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, ধারাবাহিকভাবে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য চিন্তার বিষয়। কারণ, অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে একমাত্র রিজার্ভ তথা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

সাবেক এ গভর্নর বলেন, `উদ্বেগজনক হারে জনশক্তি রপ্তানি হ্রাসের পাশাপাশি খোলা বাজারের চেয়ে ব্যাংকে ডলারের বিনিময় হারের পার্থক্য, দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগ মন্দা, বিদেশ থেকে শ্রমিক ফিরে আসা, হুন্ডির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে।`

তবে গত ছয় মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর)সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। আর সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে এসেছে ১২৬ কোটি ডলার। আগের মাস নভেম্বরের চেয়ে যা সাড়ে ৬ শতাংশ বেশি। অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতে রেমিটেন্স প্রবাহের বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জনশক্তি রফতানির প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। তাদের হিসাবে, ২০১৩ সালে বিদেশে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছে ৪১ হাজার ২২০ জন। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ২০১১-১২ অর্থবছরের তুলনায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রায় ৩৭ শতাংশ জনশক্তি রফতানি কমেছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৭৬ থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিদেশে ৮৯ লাখ ৫৬ হাজার ৮১০ জন বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। ধারণা করা হয়, সব মিলে এ সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।