রাশিয়ায় পণ্য রফতানিতে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের আহ্বান


প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ২১ জুন ২০১৬

রাশিয়াসহ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যদ্রব্য রফতানির প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপি ২০তম ‘সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে (এসপিআইইএফ) এ আহ্বান জানানো হয়। ব্যবসায়ী সংগঠন আইবিএফবি থেকে মঙ্গলবার এ তথ্য জানায়।

এতে বলা হয়, গত ১৬ থেকে ১৮ জুন অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেট্স-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইএস-বিসিসিআই) এর উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

ফোরামের সমাপনী দিনে ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ নতুন যুগের সম্ভাবনা’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া সেন্ট পিটার্সবার্গ চেম্বারের সহ-সভাপতি ইকিতিরিনা লেবেদেভা, সিআইএস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এইচ কে কবির, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি হাফিজুর রহমান খান প্রমুখ।

বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ইউরোশিয়া অর্থনৈতিক ইউনিয়নের (ইইইউ) সঙ্গে বাংলাদেশের যোগদানে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। বিশেষ করে রাশিয়ার তৈরি পোশাকের বাজার ধরাসহ দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে আমরা এ সংক্রান্ত একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেয়েছি; মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে যোগ দিতে বাংলাদেশের আগ্রহ রয়েছে। এতে করে রাশিয়ায় বিনা শুল্কে আমাদের পণ্য রফতানিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার সুযোগ তৈরি হবে। প্রস্তাবটির বাস্তব কৌশল এখন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) যাচাই-বাছাই করছে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের তৈরি পোশাকের গুণগত মান ও স্বল্পমূল্যের সুযোগ থাকায় সহজেই রাশিয়ার বাজারে শক্ত অবস্থান নেয়া সম্ভব। রাশিয়া-বাংলাদেশের মধ্যকার ব্যাংকিং জটিলতার বিষয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে ব্যাংকিং লেনদেনের কাজ সহজ করতে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা চলছে।

পাশাপাশি দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে খুব শিগগিরই ‘যৌথ কমিশন’ গঠনের চূড়ান্ত চুক্তিটি স্বাক্ষর হলে অনেকাংশে ওই সব সমস্যার সমাধান হবে। বাংলাদেশি রফতানিকারকদের ঢাকায় অথবা মস্কোতে বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) বৈঠক আয়োজনের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সিআইএস-বিসিসিআই এর প্রতিনিধিরা অর্থমন্ত্রীর কাছে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মস্কো-ঢাকা সরাসরি বিমান চালু, বাংলাদেশ থেকে সরাসরি রাশিয়ায় পণ্য সরবরাহ ও বাংলাদেশে রুশ বিনিয়োগ বাড়ানো প্রভৃতি।

এ সম্পর্কে সিআইএস-বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট এইচ কে কবির বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা। সে লক্ষ্যে আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছি। আশা করছি, প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে।

এদিকে, সম্মেলনে দ্বিতীয় দিনের মূল অধিবেশনে বক্তব্য দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি তার বক্তব্যে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে ইঙ্গিত প্রদান করেন।

সম্মেলনে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, সিআইএস-বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট এইচ কে কবির,  সিআইএস-বিসিসিআই সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লোকমান হোসেন আকাশ, সিআইএস-বিসিসিআই ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী দ্বীন, সিআইএস-বিসিসিআই পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা, মো. এনামুল হক, মো. মোশাররফ হোসেন, শামসুল আরেফীন, মো. ফারুক আহমেদ, ড. লোকিয়ত উল্লাহ ও জাদব দেবনাথ অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, সিআইএস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের দ্বারা উন্নয়শীল বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে উন্নত করাই এ চেম্বারের মূল লক্ষ্য। সে উদ্দেশ্যেই রাশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনৈতিক সম্মেলনে এ অংশগ্রহণ করলো প্রতিনিধি দলটি।

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী সের্গেই প্রিখোদকা গত বৃহস্পতিবারে এ অর্থনৈতিক ফোরামের উদ্বোধন করেন। টানা তিন দিন ধরে চলা এই ফোরামে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, ব্রিকস বিজনেস ফোরাম, উন্নয়নশীল দেশগুলোর সংগঠন জি-২০-এর ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সম্মেলনসহ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রায় ১০০টির মতো অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

এমএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।