৮ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব


প্রকাশিত: ০৫:৫৪ পিএম, ৩১ মে ২০১৬

আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ‘বিকল্প বাজেট’ প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতি। যার আকার ধরা হয়েছে ৮ লাখ ৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব আয় থেকে আদায় সম্ভব বলে দাবি করা হয়েছে। যা মোট বাজেট বরাদ্দের প্রায় ৮০ শতাংশ। আর বাজেটের বাকি ২০ শতাংশ অর্থাৎ ঘাটতি অর্থায়নে এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায়ে বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর, সেবা খাত থেকে।

রাজধানীর ইস্কাটনে নিজস্ব কার্যালায়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় সংগঠনের সাবেক সভাপতি ড. আবুল বারকাত এই বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ৪ গুণ বেশি। ঘাটতি বাজেট আহরণে তিনি সম্পদ কর, বিউটি পার্লার, আবাসিক হোটেলের মতো ২২টি নতুন উৎসের কথা বলা করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ।

বাজেট প্রস্তাবনায় দাবি করা হয়, শুধুমাত্র করজাল সম্প্রসারণের মাধ্যমেই আয়কর ও ভ্যাট আদায় বর্তমানের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বাড়ানো সম্ভব। ঘাটতির সবটাই দেশীয় উৎস থেকে অর্থায়নের প্রস্তাবও করেছে অর্থনীতি সমিতি। এতে আরো বলা হয়, গত ৪০ বছরে অর্থনীতি ও রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন এবং গরিব ও মধ্যবিত্তের স্বার্থবিরোধী রাজনৈতিক-অর্থনীতি নির্ভর উন্নয়ন ধারা বাংলাদেশে গ্রাম ও শহরে শ্রেণি কাঠানো বদলে দিয়েছে। এতে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের দশা হয়েছে বেহাল আর অঢেল বিত্ত-সম্পদ ও ক্ষমতাপুঞ্জিভূত হয়েছে গুটিকয়েক ধনিক শ্রেণির হাতে।

বাজেট প্রস্তাবনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অর্থমন্ত্রীর খসরা বাজেটের বিপরীতে দ্বিগুণেরও বেশি ৮ লাখ ৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা দেয়া হয়। যার মধ্যে রাজস্ব আয় থেকে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা এবং এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা সরকারি-বেসরকারী যৌথ অংশীদারিত্ব, বিদেশে বসরবাসকারী দেশীয় নাগরিকদের বন্ড, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ এবং দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে আসবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থনীতি সমিতি তাদের বাজেট অর্থায়নে কোনো বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না বলে উল্লেখ করেছে। বিকল্প বাজেটে মোট বরাদ্দ ও আনুপাতিক বরাদ্দ উন্নয়ন বাজেট হবে অনুন্নয়ন বাজেটের উল্টো। এখন উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেটের বরাদ্দের অনুপাত ৩৫:৬৫। আর অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটে সেটা ধরা হেয়ছে ৭২: ২৮। এতে উন্নয়ন বরাদ্দ এখনকার তুলনায় ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭১ কোটি টাকায় এবং অনুন্নয়ন বরাদ্দ এখনকার তুলনায় ১ দশমকি ২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ২২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকায় উন্নিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অর্থনীতি সমিতির বাজেটে বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর, সেবা থেকে করপ্রাপ্তি, সম্পদ কর, বিমান ও ভ্রমণ কর, তার ও টেলিফোন কর, টেলিফোন রেগুলটরি কমিশন, এনার্জি রেগুলেটরি কমশিন, ইন্স্যুরেন্স রেগুললেটরি কমিশন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিআইডাব্লিউটিএ, সরকারি স্টেশনারি বিক্রয়কর ও পৌর হোল্ডিং করসহ মোট ১৩টি নতুন করের উৎসের প্রস্তাবনা করা হয়েছে।

সভাপতি আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সরকারের পরিসংখ্যানিক অর্থনীতি যাই বলুক না কেন, গবেষণা বলছে দেশে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৬৬ ভাগ অর্থাৎ ১০ কোটি ৫৫ (৬৬ ভাগ) লাখ মানুষই দরিদ্র ও বঞ্চিত। ৩১ দশমকি ৩ ভাগ অর্থাৎ ৫ কোটি এক লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত। আর ২ দশমিক ৬ ভাগ অর্থাৎ ৪৪ লাখ মানুষ ধনী। বিগত ৩০ বছরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখে। দরিদ্র জনসংখ্যার এই বৃদ্ধি জাতীয় উন্নয়ন ব্যর্থতারই বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

এমএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।