কৃষিপণ্যের চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনে মেলে না সরকারের নগদ সহায়তা

প্রক্রিয়াজাত কৃষি ও খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয় সরকার। দেশে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আরও রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা। এই দুই সুবিধা নিতে সব পণ্য নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত হতে হয়। অন্য কোনো কারখানা থেকে কন্ট্যাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং (চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন) করলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সুবিধা দুটি পায় না।
সরকারের এ নিয়ম চালু আছে শুধু কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে। দেশের শীর্ষ রপ্তানিখাত তৈরি পোশাক শিল্পেও এমন নিয়ম নেই। এ পরিস্থিতিতে খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এটি বড় জটিলতা। এটা নিরসন করা গেলে রপ্তানি আরও ২০-২৫ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, এখন প্রক্রিয়াজাত কৃষি ও খাদ্যপণ্যের রপ্তানি ঝুড়ি অনেক বড়। বিদেশি ক্রেতা-প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কৃষিজাত পণ্যাদির ক্রয়াদেশ একসঙ্গে দেয়। নানামুখী রপ্তানি পণ্যের মধ্যে কোনো একক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সব ধরনের পণ্য উৎপাদন করা কঠিন। যে কারণে অনেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ পাওয়ার পরে কিছু কিছু পণ্য সহ-অংশীদার উৎপাদন বা কন্ট্যাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং করছে। অর্থাৎ, নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন করার সুযোগ নেই, ওইসব পণ্য অন্য কারখানা থেকে উৎপাদন করিয়ে নিচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ২৫ শতাংশ। কারণ নগদ সহায়তা পাচ্ছে না, আবার ভ্যাটও দিতে হচ্ছে।
কন্ট্যাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের নগদ সহায়তা না পাওয়া ও ভ্যাটের বোঝা আমাদের এখন সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। একজন যখন ১০টি আইটেম কোনো প্রতিষ্ঠানে অর্ডার দেয়, তখন দেখা যায় ওই প্রতিষ্ঠান হয়তো ছয়টা আইটেম উৎপাদন করে। সেক্ষেত্রে বাকি চারটি পণ্য না দিতে পারলে অর্ডার বাতিল হয়ে যায়।- বাপা সভাপতি আবুল হাশেম
১৪৪ দেশে রপ্তানি
এ দেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে মসলা, চানাচুর, ঝালমুড়ি, বিস্কুট, সস, জেলি, আলুপুরি, পাঁপড়, নুডলস, চকলেট, বিভিন্ন ধরনের আচার, জুস, ফ্রুট ড্রিংক, চিপসসহ অর্ধশত বিভিন্ন পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৪৪টি দেশে। সেক্ষেত্রে দেশের অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানও রপ্তানি করছে। এ জটিলতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন
- প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আশার আলো
- কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সম্ভাবনা অসীম, অর্জন সীমিত
- ‘কৃষিপণ্য রপ্তানি ৫ বিলিয়ন করা সম্ভব’
- ২০২৭ সালের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে কাজ করছি
নিডস অ্যাগ্রো ফুড প্রক্রিয়াজাত কৃষি ও খাদ্যপণ্যের প্রায় ৫০ ধরনের পণ্য উৎপাদন করে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা অনেক সময় ১০০ ধরনের পণ্যের একটি বড় প্যাকেজের অর্ডার পাচ্ছি। কিন্তু সব পণ্য নিজেরা উৎপাদন করছি না। সেক্ষেত্রে অন্যের কাছে নিলে প্রণোদনা পাচ্ছি না, ভ্যাট দিতে হচ্ছে। ফলে দাম বেড়ে যাচ্ছে। ওই অর্ডার ভারত-পাকিস্তানের হাতে চলে যাচ্ছে। কারণ তারা প্রণোদনা পায়। আমাদের চেয়ে কম খরচে পণ্য তারা সরবরাহ করতে পারে।’
এসব বিষয়ে প্রক্রিয়াজাত কৃষি ও খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি আবুল হাশেম জাগো নিউজকে বলেন, ‘কন্ট্যাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের নগদ সহায়তা না পাওয়া ও ভ্যাটের বোঝা আমাদের এখন সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। একজন যখন ১০টি আইটেম কোনো প্রতিষ্ঠানে অর্ডার দেয়, তখন দেখা যায় ওই প্রতিষ্ঠান হয়তো ছয়টা আইটেম উৎপাদন করে। সেক্ষেত্রে বাকি চারটি পণ্য না দিতে পারলে অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। কারণ বায়ার বাকি কিছু পণ্য অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে নিতে চান না, সেটা বাড়তি ঝামেলা মনে করে।’
আমরা চাই, সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের রপ্তানি বাড়াতে। আমরা আগামী দুই বছরের মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলারের যে নতুন রপ্তানি মাইলফলকে যেতে টার্গেট করেছি, সেটা পূরণে সহায়তা করবে।- বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক
আবুল হাসেম বলেন, ‘তখন সেই অর্ডার ভারত-পাকিস্তানে চলে যায়। এভাবে আমরা অনেক অর্ডার হারিয়েছি। আমি মনে করি, এ সুবিধা থাকলে আমাদের রপ্তানি বাড়বে আরও ২০-২৫ শতাংশ। দেশের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।’
বিষয়টি নিয়ে বাপা বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে কন্ট্যাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের বিপরীতে নগদ সহায়তা দিতে আবেদন করেছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির দায়িত্বশীলরা।
বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক বলেন, ‘দুই মন্ত্রণালয়ে আমরা চিঠি দিয়েছি। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করার জন্য আবেদন করা হয়েছে বাপার পক্ষ থেকে। আমরা চাই, সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের রপ্তানি বাড়াতে। আমরা আগামী দুই বছরের মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলারের যে নতুন রপ্তানি মাইলফলকে যেতে টার্গেট করেছি, সেটা পূরণে সহায়তা করবে।’
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) আবদুর রহিম খান জাগো নিউজকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি অবগত আছে। তবে সামনে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের একটা বিষয় থাকায় অর্থ বিভাগ নতুন করে কোনো সাবসিডির সুপারিশ নিচ্ছে না। বরং যেগুলো ছিল, সেগুলো কমে আসছে। তারপরও ট্যারিফ কমিশন রপ্তানিকারকদের এ আবেদনের যৌক্তিকতা নির্ধারণ করতে পারে। এরপর এ বিষয়টির সিদ্ধান্ত।
এনএইচ/এএসএ/এমএস