মিষ্টির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ১২০ টাকা
কয়েক সপ্তাহ বাদে যদি মিষ্টি কিনতে যান, তবে থমকে যাবেন। দাম শুনে আপনার মাথা ঘুরে যাবে নিশ্চিত। কারণ রাজধানীতে প্রকারভেদে প্রতি কেজি মিষ্টির দাম ৪০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মিষ্টির দাম নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। অনেকে ভাবছেন দু-একজন দোকানি বাড়তি দাম নিচ্ছেন কিন্তু তা নয়, রাজধানীর ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের প্রায় প্রতিটি মিষ্টির দোকানের একই অবস্থা।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) পল্টন, এলিফ্যান্ট রোড ও ধানমন্ডি এলাকার মিষ্টির দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে এমনটা।
বাংলাদেশে মোট যে পরিমাণ মিষ্টি বিক্রি হয় তার অর্ধেক রসগোল্লা বলে জানিয়েছেন মিষ্টি বিক্রেতারা। হরেক রকম মিষ্টি এলেও রসগোল্লার দাপট এখনো কমেনি। এখন ঢাকায় সাধারণ রসগোল্লা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকায়, যা আগে ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি হতো।
এলিফ্যান্ট রোডে রস মিষ্টির শোরুম ম্যানেজার সালাউদ্দিন বলেন, আমাদের কোম্পানি প্রকারভেদে মিষ্টির দাম ৪০ থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়েছে। সাধারণ রসগোল্লা, সাদা ও কালো মিষ্টির দাম কম বেড়েছে। দামি মিষ্টিগুলোর দাম বেশি বেড়েছে।
বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারে জনপ্রিয় ক্ষীর মালাই, গোলাপজাম, মালাইকারীর মতো উন্নতমানের মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা।
পাশে চমচম হাউজে টাঙ্গাইলের চমচম বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ টাকায়। এ মিষ্টি আগে ৩৬০ টাকায়ও বিক্রি হতো বলে জানান ওই দোকানের বিক্রেতা চঞ্চল দাস।
শুধু মিষ্টি নয়, মিষ্টির দোকানে বিক্রি হওয়া নিমকি, সন্দেশ, দই, ঘিসহ অন্যান্য দুধের তৈরি পণ্যের দামও বেড়েছে।
মিষ্টি প্রস্তুতকারকরা বলছেন, মিষ্টির প্রধান কাঁচামাল দুধ, চিনি ও ময়দা। এ তিনটি পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার প্রভাব পড়েছে মিষ্টির দামে।
বাংলাদেশ মিষ্টি প্রস্তুতকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মুসলিম সুইটস্ অ্যান্ড বেকারির স্বত্বাধিকারী আমিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এখন মিষ্টি তৈরির এমন কোনো উপকরণ নেই যার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। চিনি, ময়দা, ডালডা, ছানা, গুঁড়াদুধ সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। সেজন্য বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, যে পরিমাণে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে মিষ্টির দাম তার চেয়ে কমই বেড়েছে। এখনও মিষ্টি বিক্রি করে লোকসান করছেন অনেকে।
সম্প্রতি কোম্পানিগুলো তরল দুধের দাম প্রতি লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর কারণে এখন দুধ সরবরাহকারীদের দুধের দাম বাড়িয়ে দিতে হয়েছে বলেও যুক্ত করেন আমিনুর রহমান।
নতুন দামে মিষ্টি বিক্রি করছেন দোকানদাররা-ছবি জাগো নিউজ
যদিও বাংলাদেশ মিষ্টি প্রস্তুতকারক সমিতির পক্ষ থেকে মিষ্টির দাম বাড়ার কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি জানিয়ে আমিনুর বলেন, ঘোষণার আগেই যে যার মতো দাম বাড়িয়েছে। সেটা নিয়ে সমিতির আক্ষেপ রয়েছে।
বাংলাদেশে মিষ্টির ব্যবসা একসময় ঘোষদের দখলে থাকলেও এখন অবস্থা বদলেছে। রাজধানীতে বড় বড় মিষ্টির ব্র্যান্ড চাহিদার প্রায় পুরোটা পূরণ করছে। রাজধানীর বাইরের জেলা শহর পর্যন্ত পৌঁছেছে তারা।
প্রায় ৩০ বছর আগে আালাউদ্দিন সুইটমিট আউটলেট খুলে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করলেও এখন ঢাকায় বনফুল, মিঠাই, মিনা সুইটস, প্রিমিয়াম সুইটস, মুসলিম সুইটস, রস লিমিটেড, ফুলকলিসহ অনেক ব্র্যান্ড রয়েছে। যাদের অধিকাংশ ব্র্যান্ড বাংলাদেশ মিষ্টি প্রস্তুতকারক সমিতির সদস্য।
সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও এ খাতের ব্যবসায়ীদের ধারণা, বাংলাদেশে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার মিষ্টির ব্যবসা হয়।
সমিতির তথ্য, সারাদেশে প্রায় এক হাজারের বেশি মিষ্টির দোকান বা আউটলেট রয়েছে, যেগুলো করপোরেট মিষ্টি ব্যবসায়ীদের দ্বারা পরিচালিত। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে পাঁচ শতাধিক আউটলেট।
ঢাকার এসব শোরুমে কমপক্ষে তিন থেকে চার কোটি টাকার মিষ্টি বিক্রি হয়। এর বাইরে সারাদেশে কয়েক হাজার মিষ্টির দোকান রয়েছে বিভিন্ন হাট-বাজারে, যা সাধারণত এলাকার ঘোষরা দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে।
এখন শুধু দেশে নয়, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশেও তাদের আউটলেট খুলেছে। আবার করপোরেট প্রতিষ্ঠানে মিষ্টির কারিগর হিসেবে বাংলাদেশের বাইরে ভারতেরও কিছু কারিগর রয়েছেন। যারা কলকাতাসহ অন্যান্য এলাকার প্রসিদ্ধ মিষ্টি তৈরি করেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কারিগরদের দেশের বাইরে থেকেও প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসছে।
এনএইচ/এসএইচএস/জেআইএম