রডের বাজার ‘নরম’ তবু মিলছে না স্বস্তি

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০২২
দেশের বাজারে রডের দাম কমতে শুরু করেছে-ফাইল ছবি

অস্বাভাবিক বাড়ার পর দেশের বাজারে নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম প্রধান উপকরণ রডের দাম কমতে শুরু করেছে। কোম্পানি ভেদে এরইমধ্যে এক টন রডের দাম কমেছে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। এরপরও স্বাভাবিকের তুলনায় এখনো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে রড। ফলে দাম কমলেও তা ক্রেতাদের খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়া এবং ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের প্রেক্ষিতে দেশের বাজারে সম্প্রতি অস্বাভাবিক হারে বাড়ে রডের দাম। গত মার্চে দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো এক টন রডের দাম ৯০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।

রডের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে অনেকেই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। যার প্রেক্ষিত্রে রডের চাহিদা কমে গেছে। আর চাহিদা কমায় এখন রডের দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, একমাত্র বিএসআরএম ছাড়া গত কয়েকদিনে সব কোম্পানির রডের দাম টনে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে। এমন দাম কমার পরও রডের চাহিদা বাড়েনি। ফলে রড বিক্রিতে এখন মন্দা দেখা দিয়েছে।

তারা আরও বলছেন, রডের বিক্রি কমে যাওয়ায় কোম্পানিগুলো দাম কমাতে শুরু করেছে। যদি চাহিদা এমনই থাকে তাহলে কয়েকদিনের মধ্যে রডের দাম আরও কমবে। চাহিদায় মন্দা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামালের দামও কমেছে। এর একটা প্রভাবও বাজারে পড়তে পারে।

ঢাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বরাবরের মতো এখনো বাজারে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিএসআরএম’র রড। বিএসআরএম’র ৬০ গ্রেড এক টন রড বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার টাকা, যা গত মার্চে ছিল ৯০ হাজার ৫০০ থেকে ৯১ হাজার টাকা।

অপরদিকে মার্চে একেএস ৮৮ থেকে ৮৯ হাজার টাকা, কেএসআরএম ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার টাকা, জিপিএইচ ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার টাকা, বন্দর ৮৮ হাজার ৫০০ থেকে ৮৯ হাজার টাকা, কেএসএমএল ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার টাকা টন বিক্রি হয়। এছাড়া আনোয়ার, রহিমসহ কয়েকটি কোম্পানির রডের টন ছিল ৮৬ থেকে ৮৭ হাজার টাকা। এখন এসব কোম্পানির রড ৭৯ হাজার থেকে ৮২ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

রডের দামের বিষয়ে পুরান ঢাকার ভান্ডার ট্রেডার্সের মো. শরিফ বলেন, বিএসআরএম রডের দাম তেমন কমেনি। এখনো বিএসআরএম’র এক টন রড ৯০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুদিন আগে ৮৯ হাজার টাকা বিক্রি হওয়া বন্দর রড এখন ৮২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লোকাল কিছু রড ৭৯ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সব কোম্পানির রডের দাম হু হু করে বেড়েছিল। রডের অনেক দাম হয়ে যাওয়ায় অনেকে কাজ বন্ধ করে দেয়। এতে রডের চাহিদা কমে যায়। বিক্রি না থাকায় প্রায় সব কোম্পানি রডের দাম কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও রডের বিক্রি বাড়ছে না। তাই আমাদের ধারণা ৮-১০ দিন পর রডের দাম আরও কমতে পারে।

যোগাযোগ করা হলে কদমতলী স্টীল মিলস প্রাইভেট লিমিটেডের (কেএসএমএল) চেয়ারম্যান আজিজ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে রডের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। রডের অস্বাভাবিক দাম হওয়ার কারণে অনেকে কাজ বন্ধ রেখেছেন। ফলে রডের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে এখন রডের বাজার নরম। আমাদের ধারণা রডের দাম সামনে আরও একটু কমতে পারে।

তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধার পর রডের কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে যায়। সম্প্রতি কাঁচামালের দাম কিছুটা কমেছে। তবে কাঁচামালের দাম যে হারে কমেছে, রডের দাম কমেছে তার কয়েকগুণ বেশি হারে। গত কয়েকদিনে কাঁচামালের দাম টনে কমেছে ২-৩ হাজার টাকা। আর আমরা রডের দাম কমিয়েছি ৮-৯ হাজার টাকা। মূলত চাহিদা না থাকায় আমরা এমন দাম কমাতে বাধ্য হয়েছি।

বিএসআরএম স্টিলের কোম্পানি সচিব শেখর রঞ্জন কর জাগো নিউজকে বলেন, রডের উৎপাদন খরচ এখনো অনেক বেশি। যে কারণে আমরা রডের দাম কমাইনি। যারা কমিয়েছে তারা বলতে পারে কেন দাম কমিয়েছে।

সম্প্রতি রডের কাঁচামালের দাম কমেছে, এরপরও আপনাদের রডের দাম না কমার কারণ কি? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, যে কাঁচামালের দাম কমেছে, সেই কাঁচামাল এখনো দেশে এসে পৌঁছায়নি। কম দামে কেনা কাঁচামাল আসলে তখন আমরা দাম কমাবো।

এদিকে কিছু কোম্পানি রডের দাম বড় অঙ্কে কমালেও তা ক্রেতাদের খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে না। এ বিষয়ে নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত রামপুরার মো. হায়দার আলী বলেন, কিছু কোম্পানি রডের দাম কিমিয়েছে সত্য। কিন্তু এরপরও রডের এখন যে দাম তা স্বাভাবিক না। কারণ বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখেন এবার অস্বাভাবিক দাম বাড়ার আগে রডের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৮০ হাজার টাকা। ওয়ান ইলেভেনের সময় ওই দাম হয়েছিল।

তিনি বলেন, দেশে তো এখন কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তাহলে রডের এতো দাম হবে কেন? ৭-৮ হাজার টাকা দাম কমার পরও এখনো এক টন রড ৮০ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। তাহলে এটা কিভাবে স্বাভাবিক দাম হয়। এতো দামে রড কিনে কাজ করা সম্ভব না। তাই কাজ বন্ধ রেখেছি। রডের দাম আরও একটু কমলে আবার কাজ শুরু করবো।

পুরান ঢাকায় রড কিনতে আসা ফকিরাপুলের বাসিন্দা মো. হায়দার আলী বলেন, গত মাসে রড কিনতে এসে শুনি বন্দরের এক টন রডের দাম ৮৯ হাজার টাকা। তখন এখানকার ব্যবসায়ীরা পরামর্শ দিয়েছেলেন কিছুদিন পর রড কেনার জন্য। এখন ৮২ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৮-১০ দিন পর দাম আরও একটু কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই আপাততো রড না কিনে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এমএএস/এসএইচএস/জিকেএস

কিছুদিন আগে সব কোম্পানির রডের দাম হু হু করে বেড়েছিল। রডের অনেক দাম হয়ে যাওয়ায় অনেকে কাজ বন্ধ করে দেয়। এতে রডের চাহিদা কমে যায়। বিক্রি না থাকায় প্রায় সব কোম্পানি রডের দাম কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও রডের বিক্রি বাড়ছে না। তাই আমাদের ধারণা ৮-১০ দিন পর রডের দাম আরও কমতে পারে।

দেশে তো এখন কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তাহলে রডের এতো দাম হবে কেন? ৭-৮ হাজার টাকা দাম কমার পরও এখনো এক টন রড ৮০ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। তাহলে এটা কিভাবে স্বাভাবিক দাম হয়। এতো দামে রড কিনে কাজ করা সম্ভব না।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।