কাজে আসছে না ৩৪ কোটি টাকার সেতু, খেয়ায় পারাপার

মো. সজল আলী মো. সজল আলী মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:৪৪ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সেতু থাকার পরও এখনো ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হচ্ছে মানুষ

সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু। নির্মাণের পরও তিন বছর ধরে খেয়ায় পারাপার হচ্ছেন দুই পাড়ের অন্তত ৫০ গ্রামের মানুষ। এতে পূর্বের ন্যায় ভোগান্তিতে পড়ছেন ওই দুই লক্ষাধিক মানুষ।

সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের বৈকুন্ঠপুরে কালিগঙ্গা নদীর ওপর এ সেতু নির্মাণের দরপত্র দেওয়া হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। দরপত্র অনুযায়ী ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। দুই দফা সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ করার নির্দেশনা ছিল। পরে ২০২৩ সালের প্রথমদিকে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক হয়নি এখনো।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় সেতুর দুই পাড়ে ৬৩০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল। সেতুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মাণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে ঝুঁকি নিয়ে খেয়ায় পার হচ্ছে দুই পাড়ের দুই লক্ষাধিক মানুষ।

কাজে আসছে না ৩৪ কোটি টাকার সেতু, খেয়ায় পারাপার

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা এবং অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হলেও ভূমি অধিগ্রহণ আর স্থাপনার ক্ষতিপূরণের টাকা তিন বছরেও বুঝে পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে না পাওয়ায় জমি ছাড়ছেন না তারা। জমি ও স্থাপনার মালিকরা বলছেন, তিন বছর ধরে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার ধর্না দিয়েও কাজ হচ্ছে না।

পূর্ব উথুলী গ্রামের মো. মোনা মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলার প্রায় ছয় ইউনিয়নের মানুষের সদর উপজেলায় যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা এটা। যদি সেতুর কাজ শেষ হতো তাহলে সবার জন্যই সুবিধা হতো। এখন ঘিওর ঘুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এতে খরচও অনেক বেড়ে যায় আর সময়ও নষ্ট হয়।

আরও পড়ুন:

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

একই গ্রামের মো. আজাদ মিয়া বলেন, বৈকুন্ঠপুর ঘাটের খেয়া রাত ৯টার দিকে বন্ধ হয়ে যায়। জরুরি যাতায়াতের কোনো রকমের ব্যাবস্থা থাকে না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ব্রিজের কাজটি সম্পন্ন হয়ে গেলে আমাদের খুব উপকার হয়।

বেড়াডাঙ্গা গ্রামের মো. দুদু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের কারণে এ ব্রিজের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তিনি ভূমি অধিগ্রহণে একটি জটিলতা সৃষ্টি করে রেখে গেছেন। সে কারণে ভূমি অধিগ্রহণও শেষ হচ্ছে না ব্রিজের কাজটিও শেষ হচ্ছে না।

কাজে আসছে না ৩৪ কোটি টাকার সেতু, খেয়ায় পারাপার

বিজ্ঞাপন

সেতু নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. মাসুদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, কাজ শুরু করতে গেলে ভূমির মালিকরা বারবার বাধা দিচ্ছেন। এমন জটিলতায় বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে অধিগ্রহণ হয়ে গেলে কাজ শেষ করতে ৪-৫ মাস সময় লাগবে।

ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, ব্রিজের কাজ শেষ। কয়েকটা টিম এসেও কাজটা দেখে গেছেন। ডিসি অফিস থেকে ল্যান্ড অর্ডার পেলে ঠিকাদারের লোকজন কাজ শুরু করবেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী এবিএম খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় জমির মালিকরা সংযোগ সড়কের কাজ করতে দিচ্ছেন না। আর ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি দেখেন ডিসি অফিস।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে কথা বলতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লার মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আরএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।