পদবঞ্চিতদের অভিযোগ
বিএনপি নেতাদের চাঁদাবাজির কারণে কুষ্টিয়া মোকামে চালের দাম বাড়ছে

কুষ্টিয়ার মোকামে চালের দাম বাড়ার জন্য বিএনপির কয়েকজন নেতার চাঁদাবাজিকে দায়ী করেছেন দলটির পদবঞ্চিতরা। একইসঙ্গে জেলাজুড়ে চাঁদাবাজি, হাট-ঘাট, বাজার দখল, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ বর্তমান কমিটির নেতারা করছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। মসজিদের জায়গা ও বিএটি (ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো) দখলও বাদ পড়েনি বলে জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে কুষ্টিয়ায় এক বিক্ষোভ সমাবেশে এসব অভিযোগ করেন দলটির পদবঞ্চিতরা।
গত ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে পদবঞ্চিত ও অবমূল্যায়িত নেতাকর্মীরা ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল ১০টা থেকে শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। অন্যদিকে দুপুর ১২টার দিকে শহরের ইসলামিয়া কলেজ মাঠে জড়ো হয়ে শতাধিক নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। শহরের এনএস রোড প্রদক্ষিণ করে শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে যায়। তারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসময় নেতাকর্মীরা ফটকের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। এ নিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেহাবুর রহমান পুলিশ নিয়ে ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে যান। এসময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের কেউ কেউ জোর করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পরে শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনেই সমাবেশ করেন তারা।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে সমাবেশে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আইনজীবী শামিমুল হাসান অপু বলেন, ‘দলের নিবেদিত প্রাণ ও আওয়ামী দুঃশাসনের হামলা-মামলা-নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতাদের চাঁদাবাজির কারণে জেলার বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, মসজিদের জায়গা দখল ও চালের দাম বেড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, কুষ্টিয়া শহরের হাট-ঘাট, বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, সারের ব্যবসা, বিএটি (ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো) দখল—সব কর্মকাণ্ড জেলা বিএনপির নেতৃত্বে সংঘটিত হচ্ছে।
জেলা কৃষকদলের সাবেক সভাপতি গোলাম কবির তার বক্তব্যে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিএনপির কমিটিতে ঢুকিয়ে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এই কমিটি মানি না।’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বশিরুল আলম চাঁদ বলেন, ‘এই কমিটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ মানে না। তারা নিজেদের মতো চলে। মামা-ভাগনে কমিটি বাতিল না হলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।’
জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মেজবাউর রহমান পিন্টু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনকারী এই আহ্বায়ক কমিটি বাতিল না হলে রাজপথে থেকে দাবি আদায়ে আন্দোলন আরও কঠোর করা হবে।’
জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, কমিটি বাতিল না হলে কুষ্টিয়াবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কুষ্টিয়া অচল করে দেওয়া হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এক বিজ্ঞপ্তিতে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কমিটি বাতিল করা হয়। ২০১৯ সালের ৮ মে সৈয়দ মেহেদী আহমেদকে সভাপতি ও সোহরাব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। এর আগে ২০১২ সালের গঠিত কমিটিতেও এই দুজন একই পদে ছিলেন।
সম্প্রতি উপজেলা ও পৌর কমিটির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কমিটিতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের আস্থাভাজন দোসররা জায়গা পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে গঠন করা হয় কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে, তাদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না।
এর আগে গত ১৭ নভেম্বর কমিটি বাতিলের দাবিতে শহরের এনএস রোডে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নেতাকর্মীরা মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। একই দাবিতে ৬ নভেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন নেতাকর্মীরা। পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে দাবি আদায়ে তিন দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন তারা।
চালের দাম বেড়ে যাওয়া ও চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন বলেন, আমি কর্মশালায় আছি। তারা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অমূলক ও কল্পনাপ্রসূত। এসব কথার কোনো সারমর্ম নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আল-মামুন সাগর/এসআর/জেআইএম