জলাবদ্ধতায় বন্ধ ৫০০ একর জমির চাষাবাদ

বিধান মজুমদার
বিধান মজুমদার বিধান মজুমদার , জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৬:০৪ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
শরীয়তপুরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে অন্তত ৫০০ একর জমির আবাদ/ছবি-জাগো নিউজ

দেখলে মনে হবে জলাশয় কিংবা বাঁওড়। অথচ পাঁচ বছর আগেও চিত্র ছিল ভিন্ন। এই জমিতে চাষাবাদ হতো ধান-পাট, পেঁয়াজ-রসুনসহ নানান সবজি। তবে একটি খাল ভরাট করে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করায় বন্ধ হয়ে গেছে পানির প্রবাহ। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে অন্তত ৫০০ একর জমির আবাদ। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা।

সড়ক ও জনপথ (সওজ), কৃষি অধিদপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের গাগ্রীজোড়া এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি ছোট খাল। কয়েক বছর আগেও খালটিতে ছিল পানিপ্রবাহ। তবে ঢাকা-শরীয়তপুর মহাসড়কের কীর্তিনাশা নদীতে তৈরি একটি সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে অপরিকল্পিতভাবে খালের মুখসহ প্রায় ৪০০ মিটার অংশ ভরাট করেছে সওজ। এতে খালের মুখ ভরাট হয়ে বন্ধ হয়ে যায় পানিপ্রবাহ। আর কৃষিজমির পানি অপসারণ না হওয়ায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় কচুরিপানা আর আবর্জনার দখলে চলে গেছে অন্তত ৫০০ একর ফসলি জমি। ফসলের আবাদ করতে না পারায় দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। দ্রুত খালটি খননের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার দাবি তাদের।

বিজ্ঞাপন

জলাবদ্ধতায় বন্ধ ৫০০ একর জমির চাষাবাদ

ষাটোর্ধ্ব আলী হোসেন খা। চলতি বোরো মৌসুমেও পানিতে তলিয়ে আছে তার পাঁচ একরের বেশি আবাদি জমি। ধান বিক্রি করে সংসার চালানো আলী হোসনকেও এখন পরিবারের জন্য ধান কিনতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘একসময় আমার কয়েকশ মণ ধান হতো। সেই ধান বিক্রি করে পরিবারের জোগান চলতো। কিন্তু দুই বছর ধরে খাল ভরাট করে ব্রিজের রাস্তা তৈরি করায় জমির পানি কোথাও নামতে পারে না। এখন সেই ধানের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে।’

জলাবদ্ধতায় বন্ধ ৫০০ একর জমির চাষাবাদ

হোসেন খার মতো এমন দশা এই অঞ্চলের অন্তত শতাধিক কৃষকের। জলাবদ্ধতার কারণে তারা চাষাবাদ করতে পারছেন না। জমিগুলো অনাবাদি হয়ে জলাধারে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জমিগুলোতে রসুন, পেঁয়াজ আর ধানপাট হতো। এখন বর্ষার পানি নামতে না পারায় জমিগুলোতে কচুরিপানা হয়েছে। আমাদের খালটি যদি আগের মতো চালু করা করা যেতো, তাহলে আমরা কৃষকরা বাঁচতে পারতাম।’

জলাবদ্ধতায় বন্ধ ৫০০ একর জমির চাষাবাদ

এ বিষয়ে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আবুল হোসেন মিয়া বলেন, ‘কোটাপাড়া ব্রিজের সংযোগ সড়কের কারণে গাগ্রীজোড়া খালটির পানিপ্রবাহ বন্ধ রয়েছে। এতে জলাবদ্ধতায় আমাদের ৪০০-৫০০ একর ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকের লোকসান কমিয়ে আনতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের সময় ডিজাইনে খালটি বিবেচনা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিল। তবে সড়ক নির্মাণ শেষে খালটির পানিপ্রবাহ আগের মতো স্বাভাবিক করতে আমাদের পক্ষ থেকে যেটা করা প্রয়োজন সেটা করবো।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।