বিডিআর হত্যাকাণ্ড

১৬ বছর কারাবাসে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন ফজলুর রহমান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৪:৪৮ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

১৬ বছর পর স্বামী বাড়ি ফিরেছেন। স্বজনদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলেও দুশ্চিন্তায় স্ত্রী রাশেদা আক্তার। দীর্ঘ কারাবাসে অনেকটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন বিডিআরের ল‍্যান্স করপোরাল কুড়িগ্রামের ফজলুর রহমান। কীভাবে স্বামীর চিকিৎসা করাবেন সে চিন্তায় অস্থির রাশেদা।

ফজলুর রহমানের বাড়ি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের ধাউরারকুঠি গ্রামে। বাবার নাম মৃত শাহার আলী। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় কারাভোগের পর ২৩ জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্ত হন। পরে ২৪ জানুয়ারি নিজ বাড়িতে ফেরেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় ও স্বজনরা জানান, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ফজলুর রহমান দেশ সেবার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ১৯৮৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসে যোগ দেন। সীমান্ত রক্ষায় যৌবনের দিনগুলো কেটেছে চৌকশ সিপাহি হিসেবে। এরপর ল্যান্সনায়েক পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। ২০০৯ সালে তার কর্মস্থল বিডিআর হেডকোয়ার্টার। ওই বছরের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা মামলা হয়। সে মামলায় ১৬ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পান ফজলুর রহমান।

জামিনে মুক্ত হলেও ফজলুর রহমান কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে। দীর্ঘদিন স্বামী না থাকায় কোনোমতে সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকলে এখন তার চিকিৎসা ও সন্তানদের নিয়ে কীভাবে দিন কাটবে সে শঙ্কায় স্বজনরা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

স্ত্রী রাশেদা বেগম বলেন, ১৬টি বছর সমাজের নানা সমালোচনা সহ্য করে খেয়ে না খেয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেছি। নিজের সন্তান না থাকায় ননদের সন্তানকে নিয়ে মানুষ করেছি। ছোট থেকে সেই মেয়ে বাবাকে (ফজলুর রহমান) খুঁজেছে। আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি। এখন স্বামী ফিরে আসলেও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। অনেককে চিনতে পারছেন আবার অনেককে চিনতে পারছে না। আবোল-তাবোল বলছে। আমি এখন কি করবো, কোথায় যাবো?

১৬ বছর কারাবাসে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন ফজলুর রহমান

ফজলুর রহমানের বড় ভাই ছামাদ আলী বলেন, অভাব-অনটন থাকায় ফজলুর রহমানের লেখাপড়া বন্ধ করে বিডিআরে পাঠাই। সে খুব ভালো ছিল। ছোট দুই ভাইকে তার অনুপ্রেরণায় সেনাবাহিনীতে দেই। ফজলুর রহমান দেশের জন্য কাজ করেছে। হঠাৎ কী থেকে কী হয়ে গেল বুঝতে পারিনি। ১৬ বছর ভাই কারাগারে ছিল আমরা তাকে দেখতে পর্যন্ত যেতে পারি নাই। মানুষ আমাদের ঘৃণার চোখে দেখেছে। এ কয়েক বছরে আমাদের বাবা- মা, এক বোনসহ ৯ জন স্বজন মারা গেছেন। তাদের কাউকে দেখতে পারেনি সে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ইউসুফ আলী জানান, বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণার আমরা দুই ভাই সেনাবাহিনীতে যোগ দেই। সেই পরিবারের সদস্য হয়েও আমার ভাইকে বিনা দোষে ১৬ বছর কারাভোগ করতে হল। ১৯ তারিখের যে জাজমেন্ট ছিল সেটাতে আমরা খুশি। আমাদের ভাইকে ফিরে পেয়েছি। তবে ভাইয়ের চাকরি নাই। এখন তিনি অসুস্থ। কীভাবে তার সংসার চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। সরকারের কাছে তার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই।

তাসলিমা খাতুন নামের এক স্বজন জানান, ১৬ বছর এ পরিবারের ওপর দিয়ে অনেক দুঃখ-কষ্ট গেছে। এখন ফজলুর ভাই ফিরে আসলেও রোগে-শোকে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা দরকার। সরকারকে তার চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন করতে হবে।

অসুস্থ বিডিআর সদস্য ফজলুর রহমান বলেন, মামলার সঙ্গে কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে মুক্ত হয়েছি। বাবা-মা এক বোনসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয় মারা গেছেন। তাদের কারও মরদেহ দেখতে পারিনি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমার চাকরিটাই ছিল একমাত্র সম্বল। এখন তো চাকরিটাও নেই। সরকারের কাছে দাবি আমাদের পুনর্বাসন করুক। সরকার চাইলে এটা করতে পারে।

এ বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. গোলাম ফেরদৌস বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে যদি আর্থিক বা মানসিক চাপে ভেঙে পড়ার মত কোনো কিছু হয় তাহলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।

ফজলুল করিম ফারাজী/আরএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।