টাকার অভাবে থেমে যাচ্ছে নুরনাহারের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন

মাধ্যমিকে ও উচ্চমাধ্যমিকে কৃতিত্বের সঙ্গে অর্জন করেছেন গোল্ডেন এ প্লাস। টিফিনের জমানো টাকায় ফরম কিনে অংশ নেন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়। সেখানেও পেয়েছেন সফলতা। তবে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও অর্থের অভাবে ভর্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
এ গল্প গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার তেঘরিয়া এলাকার দিনমজুর রুকু মল্লিক ও গৃহিণী পারুল বেগমের মেয়ে নুরনাহার অন্তরার। গত ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা হলে জানা যায় তিনি উত্তীর্ণ হয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
ছোটবেলা থেকে পড়ালেখায় মনোযোগী নুরনাহার ২০২২ সালে জেলা শহরের সরকারি বীণাপাণি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০২৪ সালে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে এইচএসসিতেও পান গোল্ডেন এ প্লাস। গত ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তিনি অংশ নেন টিফিনের টাকা জমিয়ে ফরম কিনে। ফল ঘোষণার পর থেকে নুরনাহারের পরিবারের সদস্যরা খুশিতে ভাসলেও অর্থাভাবে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি নুরনাহারের ভর্তির শেষদিন। সরকার ও সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছে পরিবার।
নুরনাহারের বাবা রুকু মল্লিক এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। দিনে যা আয় করেন তা দিয়ে কোনোরকমে চলে চার সদস্যের সংসার। তার পক্ষে মেয়ের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও পড়াশোনা চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নুরনাহার অন্তরা বলেন, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর জানতে পারি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছি। এ ঘটনায় আমিসহ পরিবারের সবাই খুশি হলেও কিছুটা দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে আমাদের মধ্যে। মেডিকেলে ভর্তিসহ পড়াশোনার যে ব্যয়বহুল খরচ তা আমার পরিবারের পক্ষে চালানো সম্ভব নযা। আমার বাবা একজন দিনমজুর। প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে ঠিকমতো আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর। আমি মেডিকেলে পড়াশোনা করে একজন ভালো ডাক্তার হতে চাই। একজন গরিবের ডাক্তার হতে চাই।
নুরনাহারের মা পারুল বেগম বলেন, আমার মেয়ে ছোট থেকেই অনেক মেধাবী। শহরের একটি ভালো স্কুলে চান্স পাওয়ার পরে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম কীভাবে পড়ালেখার খরচ যোগাবো। তখন ওর মেধা দেখে স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে আপনার মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যান। তখন স্কুলের শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। গত ২০ তারিখে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলছে মা আমি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এই খবর শোনার পর গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে, ভাবতেই অন্যরকম লাগে। তবে মেডিকেলে পড়ালেখার খরচ অনেক হওয়ায় অনেকটা দুশ্চিন্তায় আছি কীভাবে এত খরচ চালাবো। সবার কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর।
নুরনাহারের বাবা রুকু মল্লিক জানান, আমি এই বৃদ্ধ বয়সেও রাজমিস্ত্রির কাজ করি। কষ্ট হলেও মেয়ের পড়ালেখা কখনো বন্ধ করিনি। আমার মেয়ে মেডিকেলে পড়ালেখা করবে জানতে পেরে গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে। যতই কষ্ট হোক মেয়েকে আমি একজন ভালো ডাক্তার বানাতে চাই। আমার মেয়ে যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে।
এ বিষয়ে নুরনাহারের প্রতিবেশী গৌরাঙ্গ বলেন, নুরনাহারের এমন সাফল্যে আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। অভাব অনটনের সংসারেও সে মেডিকেলে ভর্তির চান্স পেয়েছে। এই খবর জানার পর থেকে আমাদের মধ্যেও খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। তবে নুরনাহার অন্তরার পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আমরা এলাকাবাসী দুশ্চিন্তায় আছি। কীভাবে এত ব্যয়বহুল খরচ তারা চালাবে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমরা দ্রুতই ওই শিক্ষার্থীর খোঁজখবর নিয়ে তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবো।
আশিক জামান অভি/এএইচ/এমএস