মোংলা বন্দরে বাড়ছে জাহাজের আগমন

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলায় নতুন বছরের প্রথম দুই সপ্তাহে অন্তত ৪২টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়েছে। বেড়েছে কনটেইনার পণ্যবাহী জাহাজের আগমন। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন বন্দরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জাহাজের শ্রমিকরা। বিগত বছরের তুলনায় বেশি সংখ্যক জাহাজ আসায় বেড়েছে বন্দরের আয়ও।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে মোংলা বন্দর। নৌ, সড়ক ও রেলপথের মতো সুবিধা বিদ্যমান থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্যও এই বন্দরের ব্যবহার দারুণ সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বন্দরকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন বেড়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই মোংলা বন্দরে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন আগের তুলনায় বেড়েছে। বর্তমানে বন্দরের পশুর চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে গড়ে দৈনিক ১৮-২০টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে কয়লা, সার, সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার, এলপিজি ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আসছে। এরমধ্যে ১ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এ বন্দরে এসেছে ৪২টি জাহাজ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোংলা বন্দরের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল দীর্ঘ নৌপথের নাব্য সংকট। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী গভীরতা হারিয়ে ফেলায় ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটিতে বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন সময় নৌপথটি খনন করা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নিয়মিতভাবে খননের মাধ্যমে এই বন্দরকে গতিশীল করে তোলা হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বন্দরে ৪১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ আসে। ওই সময়ে ১০ হাজার ৩৮৬টি টিউজ কনটেইনার খালাস করা হয়। প্রথম ছয় মাসে গাড়িবাহী ১০টি জাহাজে পাঁচ হাজার ৬৩৭টি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। একই সময়ে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হয়েছে ৫২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭১ টন পণ্য, যা থেকে ২১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিদেশি জাহাজের আগমনের হার ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, কার্গো ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, কনটেইনারবাহী জাহাজ ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. শাহীন রহমান বলেন, মোংলা বন্দরে জাহাজ আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো চ্যানেলের নাব্য ঠিক রাখা। সম্প্রতি বন্দর চ্যানেলের আউটবারের খনন সম্পন্ন হওয়ায় সরাসরি বড় বড় জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারছে। চলমান ইনারবার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে আরও বেশি সংখ্যক জাহাজের আগমন ঘটবে বন্দরে।
এসআর/এমএস