ফসল আবাদ বন্ধ, জলাবদ্ধতায় অসহায় ২০ হাজার কৃষক

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২:২২ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

বোরো ধান চাষের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার পরও সুনামগঞ্জের তিন উপজেলার প্রায় ২০ হাজার প্রান্তিক কৃষক মাঠে নামতে পারছেন না। কারণ, মাঠের পর মাঠ জলাবদ্ধতায় মগ্ন। জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ করতে পারেননি কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার ৯৫টি হাওরের মধ্যে অন্যতম পাগনার হাওর। এই হাওরের ফসল ঘরে তুলতে পারলেই হাসি ফুটে দুর্গম এলাকার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের মুখে। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে এই হাওরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ঠিকমত চাষাবাদ করতে পারছেন কৃষকরা। যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

বিশেষ করে জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ও ফেনারবাক ইউনিয়নের পাগনার হাওরপাড়ের ৪০ গ্রামের মানুষ প্রায় ১০ বছর ধরে জলাবদ্ধতার কষ্টে ভুগছেন। তবে সেই কষ্ট নিরসনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কানাইখালী নদী খনন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তবে কাজের ধরন দেখে বোঝা গেছে, প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাটই ছিল সংশ্লিষ্টদের মূল লক্ষ্য। অপরিকল্পিত খনন কাজ এবং লুটপাটের কারণে এসব প্রকল্প সাফল্যের মুখ দেখেনি। এতে দুঃখ ঘোচাতে পারেনি পাগনার হাওরবাসীর।

এই যেমন পাগনার হাওরের কৃষক আক্কাছ মিয়া। প্রতিদিন হাওরে ধানের চারা রোপণের জন্য কৃষি যন্ত্র নিয়ে হাওর পাড়ে এসে বসে থাকেন। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

আক্কাস মিয়া বলেন, প্রায় ১৮ কেয়ার জমি এখনো পানির নিচে। এ বছর ফসল করতে না পারলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

Agriculture

শুধু আক্কাস মিয়া নয়, সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও জামালগঞ্জের ২০ হাজার কৃষক জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ করতে পারেননি। এরমধ্যে জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরের ১৫ হাজার কৃষক তিন হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করতে না পারায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সেই সঙ্গে অনেক কৃষক ঋণ করে পানি নিষ্কাশনের জন্য মেশিন লাগিয়েও কাজ হচ্ছে না।

পাগনার হাওরের কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, বোরো ধান ঘরে তুলতে পারলেই আমাদের বছরের খোঁড়াক হয়। কিন্তু এই বছর এখনো হাওরে জলাবদ্ধতা হয়ে পানি আটকে আছে। তবে নদীখনন যদি সঠিকভাবে করা হতো তাহলে এই সমস্যা পড়তে হতো না।

পাগনার হাওরের কৃষক সামসু উদ্দিন বলেন, এই বছর ধান না করতে পারলে বিপদে পড়ে যাবো। হয়ত গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও কাজের সন্ধানে যেতে হবে। তবে সঠিকভাবে যদি কানাই নদী খনন করা হতো তাহলে আমাদের এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

পাগনার হাওরের কৃষক হাসান আলী বলেন, ৪ কোটি টাকা আসছিল কানাই নদী খননের জন্য। কিন্তু দায়িত্বে থাকা সবাই নদী খনন না করে এই টাকা লুটে খেয়েছে। যার জন্য আমাদের বিপদে পড়তে হয়েছে। সঠিকভাবে নদী খনন হলে আজকে হাওরে জলাবদ্ধতা থাকত না।

সুনামগঞ্জে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি কৃষকরা বোরো ধান রোপণ করতে পারবেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আবারও কানাইখাল নদী খননের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হবে। চলতি বছর সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ কৃষক দুই লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোর চাষাবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ৯ লাখ ১৮ হাজার টন চাল উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।

লিপসন আহমেদ/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।