কুষ্টিয়ার মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল যাচ্ছে বিদেশে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ০৮:২৩ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
কুষ্টিয়ায় মাটির তৈরি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পের বাজার এখন দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যসামগ্রী। তবে এখনো মাটির আধুনিক মানের তৈজসপত্র তৈরি করছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির সদস্যরা। এখানকার উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।

কুমারখালীর উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামে ৪০ জন সদস্য মিলে গড়ে তুলেছেন কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৫০-৬০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মাটি আর পানি দিয়ে কাদা তৈরি করছেন কেউ থালা, বাটি ও গ্লাস তৈরি করছেন। কেউ কেউ শুকানোর পর তা যত্ন সহকারে পরিষ্কার করছেন।

সমিতির দায়িত্বরত ম্যানেজার রাজকুমার বলেন, এই শিল্পের অতীত ঐতিহ্য খুবই সমৃদ্ধশালী। একসময় ঘরে ঘরে হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হতো মৃৎশিল্পের নানান তৈজসপত্র। আমরা এখানে মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করি।

কুষ্টিয়ার মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল যাচ্ছে বিদেশে

তিন বছর ধরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন চৈতালি দাস। তার স্বামী মারা গেছেন। একটা মেয়ে আছে। তাই কোনো উপায় না পেয়ে সংসার চালাতে এই কাজ বেছে নিয়েছেন। চৈতালি জানান, এ কাজ করে মাসে তিনি তিন হাজার টাকা আয় করছেন।

শিল্পী নামের আরেক শ্রমিক বলেন, এখানে কাজ করে মাস শেষে যে বেতন দেয় তার তিন ভাগের এক ভাগ যাতায়াতেই খরচ হয়ে যায়। টানাটানির মধ্যে সংসার চালাতে হয়।

কুষ্টিয়ার মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল যাচ্ছে বিদেশে

মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনতে আসা আব্দুল লতিফ বলেন, মৃৎশিল্প বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। তবে এখন সেসব পণ্য নেই বললেই চলে। তাই কিছু পণ্য কিনতে এসেছি।

কল্যাণপুর মৃৎশিল্পের পরিচালক বটোকৃষ্ণ পাল জানান, আমার এই প্রতিষ্ঠানে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমানে দেশের চেয়ে বর্হিবিশ্বে এই শিল্পের বেশ চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে অনেক চাহিদা তৈরি হয়েছে। মফিজুল ইসলাম নামের ঢাকার একজন ব্যবসায়ী এখান থেকে পণ্য নিয়ে কাতারে রপ্তানি করেন। হাসান নামের আরেক ব্যবসায়ী রপ্তানি করেন সৌদি আরব। অপর দুজন ব্যবসায়ী এখানকার পণ্য নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান। তবে গতানুগতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এই শিল্প বেশি দিন ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব।

কুষ্টিয়ার মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল যাচ্ছে বিদেশে

তিনি বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন দরকার আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। কিন্তু প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে তাদের পক্ষে এসব আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে চাহিদা মোতাবেক পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। বারবার আবেদন নিবেদন জানানোর পরও সমবায় অধিদপ্তর কিংবা সরকারি কোনো দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়া জেলা সমবায় অফিসার আনিছুর রহমান বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের ব্যবহার কমে গেছে অনেকাংশে। এ শিল্পের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী। তবে আশার কথা কুষ্টিয়ার তৈরি মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্র আবারও নতুন করে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।

তিনি জানান, এই শিল্পের উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিতে একটি প্রকল্প ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে তা এখনো অনুমোদন হয়নি। আশা করছি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই মৃৎশিল্পের হারানো গৌরব ফিরে পাবে।

আল-মামুন সাগর/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।