ফরিদপুরে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে মৃত্যুঝুঁকি
ফরিদপুরে বেশিরভাগ রেলক্রসিং অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। ফলে এখানে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সবশেষ ৭ জানুয়ারি ফরিদপুর সদর উপজেলায় রেলক্রসিংয়ে এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পাঁচজন। এছাড়া গত এক বছরে কমপক্ষে ৩০-৪০ জন রেলে কাটা পড়ে নিহত হন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরে মোট ৯০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। প্রতিদিন ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, বেনাপোল, টুঙ্গিপাড়াসহ নিয়মিত চলাচল করছে বেশ কয়েকটি ট্রেন। এসব রেলপথের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ১৫টি স্টেশন। বৈধ-অবৈধ রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা মোট ২৭টি। এরমধ্যে মাত্র পাঁচটি রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকলেও ২২টি রেলক্রসিং অরক্ষিত। এছাড়া বেশ কয়েকটি রেলক্রসিং সম্পূর্ণ অরক্ষিত। যেগুলো স্থানীয়রা তাদের সুবিধার্থে জোরপূর্বক তৈরি করেছেন। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০ জনের মতো। এছাড়া বোয়ালমারী উপজেলার বনমালীপুর-নড়াইল, আমগ্রাম, সোতাসী এলাকায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে অন্তত সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এরমধ্যে সবশেষ ৭ জানুয়ারি সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের কাফুরা রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হন মাইক্রোবাসের পাঁচ যাত্রী।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, জেলার ওপর দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা-ঢাকা ও বেনাপোল-ঢাকা ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, পোড়াদহ, রাজশাহী, খুলনা, টুঙ্গীপাড়া, ভাটিয়াপাড়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গা, গোয়ালন্দ ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যায় ট্রেনে। ট্রেনে যাতায়াত সহজ ও নিরাপদ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এসব রুটে যাত্রীদের সংখ্যা। কিন্তু সে তুলনায় এখনো রেলরুটে রয়ে গেছে অরক্ষিত রেলক্রসিং। যার কারণে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সদর উপজেলার গেরদার কাফুরা এলাকার শেখ জাফর বলেন, এখানের রেলক্রসিংটি অরক্ষিত। কোনো গেট নেই। দোকানের কারণে হুইসেল না দিলে ট্রেন আসছে কি না বোঝা যায় না। বেশিরভাগ সময়ই চালক কোনো হুইসেল দেন না।
ভাঙ্গা উপজেলা সদরের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, গত এক বছরে ভাঙ্গা এলাকায় রেললাইন ও রেলক্রসিংয়ে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় অন্তত ১০-১৫ জন নিহত হয়েছেন। ফরিদপুরের বিভিন্নস্থানে রেললাইনে কোনো গেটম্যান বা বেরিয়ার নেই, সম্পূর্ণই অরক্ষিত। ফলে এসব স্থানে বেরিয়ার বা গেটম্যান জরুরি।
বোয়ালমারী ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা সুমন রাফি জাগো নিউজকে বলেন, বোয়ালমারী রেলস্টেশনের দুই পাশে অন্তত চারটি অরক্ষিত রেলক্রসিং রয়েছে। যা ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে প্রতিটি অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে বেরিয়ার বা গেটম্যান নিয়োগ করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী, যানবাহনের চালকসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করে এবং মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন কারণে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। তবে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে গত এক বছরে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
ফরিদপুর নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কান্তি বালা বলেন, ফরিদপুরে বিভিন্ন স্থানে বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, হাসপাতাল, স্কুলসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান বা বেরিয়ার নেই। যারা এখান দিয়ে পারাপার হন তারা নিজ দায়িত্বে পারাপার হন। এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গেটসহ লোক নিয়োগ প্রয়োজন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, রেলক্রসিংয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দরকার। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো, যাতে করে পরবর্তীতে আর এমন দুর্ঘটনা না ঘটে।
রেলওয়ের রাজবাড়ীর সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধে কাজ করছেন।
এন কে বি নয়ন/জেডএইচ/জিকেএস