আসামি সেজে আদালতে গিয়ে জামিন আদায়
লক্ষ্মীপুরের একটি মারামারি-হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি সজিব ও সাইফুল ইসলাম শুভ বিদেশে রয়েছেন। অথচ তাদের নামে ভিন্ন দুই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করে বেআইনিভাবে জামিন করানোর অভিযোগ উঠেছে।
প্রতারণার বিষয়ে ওই মামলার বাদী শামছুন নেছা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িতদের বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইলের আদালতে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী মো. রায়হান ইসলাম।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর কাছে লিখিতভাবে ব্যাখ্যাও জানতে চেয়েছেন।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মোরশেদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. লুৎফুর রহমান রহিম গাজী লিখিত ব্যাখ্যায় আদালতকে জানান, আইনজীবীর সহকারী আবুল কাশেমের পরামর্শে মামলার ২ ও ৪ নম্বর আসামি প্রবাসে থাকার বিষয়টি গোপন রেখেছেন অন্যান্যরা। ওই বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না এবং তার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালত, আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের সোন্দড়া গ্রামের আবদুল খালেকদের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে তাজুল ইসলাম খোকাদের জমিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালে আদালতে মামলা হয়। ২০২৪ সালের ১৯ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান আদালতে ৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তারা হলেন- তাজুল ইসলাম খোকা, সজীব, আনোয়ার হোসেন ও সাইফুল ইসলাম শুভ। এদিকে ঘটনার পর আসামি সজিব সৌদি আরব ও সাইফুল কাতারে চলে যান।
অন্যদিকে গেলো বছরের ৩০ জুন আসামি খোকা ও আনোয়ার জামিন নেন। তখন সজিব ও সাইফুলের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালতের বিচারক। গত ৬ নভেম্বর মামলার ২ ও ৪ নম্বর আসামির স্থলে ভিন্ন ব্যক্তিদের রামগঞ্জ আমলি আদালতে উপস্থিত করা হয়। পরে আদালত তাদেরকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। তবে আদালতে উপস্থিত করা ভুয়া ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ঘটনাটি জানতে পেরে গত ৮ ডিসেম্বর বাদী শামছুন নেছা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি সজিব ও সাইফুলকে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য ও তাদের জামিনের আদেশ বাতিল করতে আবেদন করেন। একইসঙ্গে আসামিদের নিযুক্ত কৌঁসুলি ও স্থানীয় জামিনদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রার্থনা জানিয়েছেন।
এতে আদালতের বিচারক ঘটনাটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চান। পরে ২৯ ডিসেম্বর আসামিদের আইনজীবী রহিম গাজী আদালতে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন। একই ব্যাখ্যা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে দিয়েছেন। এতে তিনি জানান, আইনজীবী সহকারী আবুল কাশেম দুইজন লোককে এনে আসামি হিসেবে আদালতে উপস্থিত করান। পরে তাদেরকে জামিন করানো হয়। তিনি আসামিদেরকে চিনতেন না।
বক্তব্য জানতে আইনজীবী সহকারী আবুল কাশেমের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তাকে এসএমএস দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
কাজল কায়েস/এফএ/জেআইএম