বরগুনা

বিসিক শিল্পনগরীর ৬০ প্লটের ৪০টিই ফাঁকা

নুরুল আহাদ অনিক নুরুল আহাদ অনিক , জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ০৪:১৬ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫
এখন পর্যন্ত ৬০টি প্লটের মধ্যে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ২০টির/ছবি-জাগো নিউজ

উচ্চমূল্য ও প্রশাসনিক জটিলতায় বরগুনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য করা বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দ নিতে আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের। ফলে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার চার বছর পার হলেও বরাদ্দহীন রয়েছে বিসিকের বেশিরভাগ প্লট।

তবে উদ্যোক্তাদের কথা মাথায় রেখে প্লটের দাম কমানোয় চলতি বছরের মধ্যে বিসিকের সব প্লটের বরাদ্দ শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বরগুনার বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মিলটন চন্দ্র বৈরাগী।

বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী/ আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের, দুই-তৃতীয়াংশ প্লটই বরাদ্দহীন

বরগুনায় বিসিক শিল্পনগরী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে বরগুনায় শিল্পনগরী স্থাপনে ৭ কোটি ৮ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জেলা শহরের ক্রোক এলাকায় ১০ দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিসিককে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। পরে দুই ধাপে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হয়।

বিসিক শিল্পনগরীতে উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে ৬০টি প্লটকে এ, বি এবং এস ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে সব প্লটের দাম শতাংশ প্রতি ৩ লাখ ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে দাম কমিয়ে ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দাম কমলেও এখন পর্যন্ত প্লট প্রস্তুতির চার বছরে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ২০টি। বর্তমানে বাকি প্লট বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলমান।

বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী/ আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের, দুই-তৃতীয়াংশ প্লটই বরাদ্দহীন

উদ্যোক্তাদের দাবি, প্লটের দাম বেশিসহ জমি পেতে রয়েছে বিভিন্ন জটিলতা। এতে অনেকেই প্লট নিতে আগ্রহী হয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেও পরবর্তীতে আবার তা ফেরত নিয়েছেন।

আসমা আক্তার সিতু নামের এক নারী উদ্যোক্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে। আমরা ছোট উদ্যোক্তা, ভবিষ্যতে কারখানা তৈরি বা অন্য ব্যবসায় আগ্রহী হতে পারি। তখন আমাদের ওই প্লট হাতছাড়া হয়ে যাওয়া বা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে প্লট নিতে আগ্রহী হয়ে ফরম সংগ্রহ করেও আবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। বরগুনায় অন্য যে উদ্যোক্তারা আছেন, তারাও হয়তো এসব কারণে বিসিকের প্লট নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।’

প্লটের দাম নিয়ে আব্দুর রহিম নামের এক ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন করার পর সব কাগজপত্র নিয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকেছিল। পরে সেখানকার প্লটের যে দাম নির্ধারণ করেছে, সে দামে আমার মতো সাধারণ উদ্যোক্তার বরাদ্দ নেওয়ার তৌফিক নেই। বাইরের জমির তুলনায় ওই জমির দাম প্রায় তিন থেকে চারগুণ বেশি। আমার কাছে ওই জমি বরাদ্দ নেওয়ার টাকা নেই। এজন্য ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছি।’

বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী/ আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের, দুই-তৃতীয়াংশ প্লটই বরাদ্দহীন

স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মো. ফয়সাল বলেন, ‘বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দে যে নিয়ম রয়েছে তা একজন তরুণ উদ্যোক্তার পক্ষে পূরণ করে প্লট বরাদ্দ নেওয়া কঠিন। তরুণ উদ্যোক্তাদের কথা চিন্তা করে যদি প্লট বরাদ্দ পেতে দাম আরও কমিয়ে একটু সহজ প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা হয়, তাহলে তরুণ উদ্যোক্তারা প্লট বরাদ্দ নিতে আগ্রহী হবেন।’

বরগুনার বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা মিলটন চন্দ্র বৈরাগী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্লটের মূল্য একটু বেশি থাকায় শুরুতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কম ছিল। তবে উদ্যোক্তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দুই দফায় প্লটের দাম কমানো হয়েছে। ৬০টি প্লটের ২০টি আগেই বরদ্দ হয়েছে। বর্তমানে ২০টি প্লট বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলমান।’

তিনি বলেন, বাকি প্লটের জন্যও কিছু কিছু আবেদন জমা হচ্ছে। আশা করি চলতি বছরেই প্লটগুলো বরাদ্দ হয়ে যাবে। কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রমও শুরু হবে।

বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী/ আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের, দুই-তৃতীয়াংশ প্লটই বরাদ্দহীন

বরগুনার বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক কাজী তোফাজ্জল হক জাগো নিউজকে বলেন, যে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে, তার মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অনুমতি নিয়ে উৎপাদন শুরু করেছে। নতুন করে ১৭-১৮টি প্লট বরাদ্দ দিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আঞ্চলিক অফিস খুলনায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানোর পর অনুমতি পেলে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হবে।

তিনি আরও বলেন, প্লটের দাম কমানোর পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে কিস্তি পরিশোধে পুরুষদের জন্য এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ছয় বছর এবং নারীদের জন্য সাত বছর করা হয়েছে।

এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।