বিএনপি নেতার মামলা বাণিজ্য, সবজি বিক্রেতাও আসামি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৬:২৫ পিএম, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫
অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন দুলাল

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দুলালের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিলে মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার ও জামিনের তদবির করছেন। টাকা না দিলে মারধর করে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেক।

ভুক্তভোগীদের তালিকায় রয়েছেন স্কুলশিক্ষক, দিনমজুর এমনকি সবজি বিক্রেতাও। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের আমলে যারা হরিরামপুর উপজেলার সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন, তাদের অনেকেই নেই আসামির তালিকায়।

বিএনপি নেতা দুলালের মামলার আসামি নিত্য সরকার পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তাকে মামলার ৩৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে গত ৩০ অক্টোবর নিজেই মারধর করে পুলিশে ধরিয়ে দেন দুলাল। তার মারধরের কারণে অসুস্থ অবস্থায় দুই মাস কারাগারেও থেকেছেন। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩০ মে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত হারুনার রশীদ খান মুন্নুর মেয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার বয়ড়া গ্রামের বাসভবনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতাকর্মীদের আলোচনা সভায় বক্তব্য চলাকালীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালান। এ ঘটনায় গত বছরের ২৯ অক্টোবর হরিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দুলাল বাদী হয়ে ৮৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমি কখনো রাজনীতি করিনি। আমার নামেও মামলা দিয়েছে। মামলার ভয়ে অনেকদিন পালিয়ে ছিলাম। পরে আমার বোন দুলালের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা দিলে দুলাল নিজেই আমার জামিনের ব্যবস্থা করে। আর কথা দেয় চার্জশিট থেকে আমার নাম কাটিয়ে দেবে।’

নিহত নিত্য সরকারের ভাই হৃদয় মণি দাস বলেন, “মামলার বাদী বিএনপি নেতা দুলাল মধ্যরাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে মারতে মারতে ‘তুই আওয়ামী লীগ করস’ বলে পুলিশের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সে একজন দিনমজুর। কাঠমিস্ত্রির কাজ করে। সারাদিন কাজ করে যে টাকা পায় তা দিয়ে তার সংসার চলে। প্রতিহিংসার মাধ্যমে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মারধরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।”

সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ। তাকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যে মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে, আমি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। টাকা দিতে পারলে হয়তো আসামি হতাম না। যারা টাকা দিছে তারা আসামি হয়নি।’

পেশায় একজন সবজিবিক্রেতা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমি সবজি বিক্রি করে সংসার চালাই। জীবনে কোনোদিন কোনো মিছিল-মিটিংয়ে যাইনি। আমার নামেও মামলা দিছে দেলোয়ার। আমার কাছে টাকা চেয়েছিল, দিতে পারিনি বলে আমার জামিন করিয়ে দেয়নি। আমি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন দুলাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার কথা বলে হয়তো অন্য কেউ টাকা নিচ্ছেন। আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। আর মামলায় যাদের নাম দিয়েছি তারা সবাই হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন।’

উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হান্নান মৃধা জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুনেছি মামলায় কয়েকজন নিরীহ লোকের নাম দেওয়া হয়েছে। আমরা ওসিকে অনুরোধ করেছি, নিরীহ লোকেদের যেন কিছু না করা হয়। আর টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যদি কেউ মামলা দিয়ে বাণিজ্য করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মমিন খান জাগো নিউজকে বলেন, আমার তদন্ত করেই আসামিদের গ্রেফতার করি। দুলালের করা মামলার আসামিদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।

সজল আলী/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।