রুমে ঢুকে ডিআইজিকে হুমকি, জিডি করেই ক্ষান্ত পুলিশ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ১২:০৬ পিএম, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী পরিচয়ে একদল শিক্ষার্থী ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে গিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমানকে হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনার ৬ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভিডিওর শুরুর দিকে একদল যুবককে ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’- এসব স্লোগান দিতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ধাক্কা দিয়ে রেঞ্জ ডিআইজি আশরাফুর রহমানের কক্ষে ঢুকে যায় ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল। ডিআইজির কক্ষে ঢুকেই শিক্ষার্থীরা চোটপাট করতে থাকেন।

তারা বলেন, ‘আপনি (ডিআইজি) প্রতি সপ্তাহে কেন বাড়িতে যান, তারাকান্দার ওসি আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহে নিহত রেদুয়ান আহমেদ সাগর হত্যা মামলার আসামিরা কেন ঘুরে বেড়াচ্ছেন? গৌরীপুরে আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালালেও কেন তাদের গ্রেপ্তার হয়নি?’

শিক্ষার্থীরা আরও বলতে থাকেন, ‘পুলিশ একটি দলকে সমর্থন করে কাজ করছে। আপনারা (পুলিশ) এমনভাবে কাজ করছেন, টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের না ধরে আপনারা ধরতাছেন কারে, জাসদের মতো ছোট দলের লোককে।’

এ ঘটনায় জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনসহ সর্বস্তরে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ সাগর হত্যা মামলায় আত্মগোপনে থাকা পলাতক আসামি ময়মনসিংহ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করে লেখেন, ‘আমাদের ময়মনসিংহের ডিআইজি সাহেবের সঙ্গে মেধাবীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়।’ এতে আরও আলোচনা-সমালোচনার খোরাক জুগিয়েছে ভিডিওটি।

পুলিশ জানায়, গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে ময়মনসিংহ মহানগর জাসদের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম মিন্টুকে সেনাবাহিনী আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করে সদর থানায় হন্তান্তর করে। তিনি গত ১৯ জুলাই নগরের কলেজ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কলেজছাত্র রেদোয়ান হোসেন সাগর হত্যার ঘটনায় গত ৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দের দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মিন্টুকে গ্রেফতারের পরদিন তাকে ছেড়ে দিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ চাপ সৃষ্টি করে। গ্রুপটির বিরুদ্ধে ডিআইজি অফিস ছাড়াও বিআরটিসি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অপতৎপরতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটি সূত্র জানায়, ছাত্র সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সহযোগী সাইবে রাকাত, আল নূর আয়াশ, ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা মাহাদী হাসান তারেক, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কর্মী মেহেদী হাসান সিয়াম, ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রলীগের ওয়ার্ড শাখার সহসভাপতি সাকিব হাসান রিমন, ছাত্রলীগ কর্মী রোহান, অলি উল্লাহ, হৃদয় ও ছাত্রদল কর্মী রাকিবুল ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কর্মী নিহাল ডিআইজি অফিসে বিশৃঙ্খলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

জানতে চাইলে ছাত্র সমন্বয়ক ও গণঅধিকার পরিষদের সাবেক নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, কাউন্সিলর মিন্টুর দুই ছেলে আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে। তাই তার বাবা গ্রেফতার হওয়ার পর আমাকে জানালে কী অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানতে আমরা কয়েকজন থানায় গিয়েছিলাম। আমি তাকে ছাড়াতে যাইনি। ওইদিন ডিআইজি অফিসে আমি যাইনি। সেখানের ঘটনার দায়ভার আমরা না।

ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতা মাহাদী হাসান তারেক বলেন, শিক্ষার্থীরা ডিআইজি অফিসে গিয়েছে, এমন খবর পেয়ে আমি তাদের ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি জানি না।

পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক গোকল সূত্রধর মানিক বলেন, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। এটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনাবিরোধী কাজ। এ ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এদিকে গত ২৮ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ডিআইজির অফিসে ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও এখনো ময়মনসিংহের পুলিশ ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছে না। শুধুমাত্র থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেই ক্ষান্ত পুলিশ।

যদিও ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাটির তদন্ত চলছে। এই ঘটনায় ফ্যাসিবাদী চক্রের ইন্ধন রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত। এটি আন্দোলনের চেতনাবিরোধী কাজ। মূলত আওয়ামী দোসরদের ইন্ধনে একটি গ্যাং এর আগেও বিভিন্ন সরকারি অফিসে বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে। যে ঘটনাটি ঘটেছে, সে বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।