সাব-রেজিস্ট্রারের কাণ্ড
আদালতের নিষেধ সত্ত্বেও দলিল রেজিস্ট্রি, প্রশ্ন ওঠায় ‘বোবার অভিনয়’
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার মিনতি দাসের বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে দলিল রেজিস্ট্রির অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে গেলে বোবার অভিনয় করেন মিনতি দাস। কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে থাকেন তার চেয়ারে।
তথ্য বলছে, ২০১০ সালের ১৯ জুলাই ২৫ শতাংশ জমি ছেলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তুর কাছে সম্পাদন দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের জুবেদা খাতুন। পরে একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রি করে দেন। মোমতাজ উদ্দিনের রেজিস্ট্রি দলিলের সেই জায়গায় জুবেদা খাতুনের অপর ছেলে আবু হানিফ ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হেবা ঘোষণা করে নিজে জমির মালিক দাবি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে মোমতাজ উদ্দিন আদালতে মামলা করেন। আদালত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ওই জমিতে দুই পক্ষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন।
সরেজমিন জানা যায়, বিবাদমান জমির মোট পরিমাণ ৪১ শতাংশ। সেখান থেকে ৮ শতাংশ জমি ১৯৯০ সালে মা জুবেদা খাতুন ছেলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তুকে দিয়ে দেন। পরে ওই জমি ফাতেমা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করেন। বাকি জমি মোমতাজ উদ্দিনের কাছে থাকা অবস্থায় ২০১০ সালে আবারও ২৫ শতাংশ জমি মোমতাজ উদ্দিনকে লিখে দেন জুবেদা খাতুন। শুরু থেকেই জমির দখলে ও খাজনা দিয়ে আসছিলেন মোমতাজ উদ্দিন। সবকিছু ঠিক থাকলেও কৌশলে দলিল করে নিজের বলে দাবি করেন মোমতাজ উদ্দিনের সহোদর আবু হানিফ। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করেন মোমতাজ উদ্দিন। পরে ওই জমিতে দুই পক্ষকে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ৩৮ লাখ টাকা মূল্যে ১৯ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেন আবু হানিফ। চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সাব-কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়।
মোমতাজ উদ্দিন মন্তু বলেন, ‘এই জমিটা আমি কয়েক যুগ ধরে ভোগদখল করে আছি। আমার মা আমাকে লিখে দিয়ে গেছেন। যখন মা লিখে দিয়েছেন তখন জমিটার দাম ছিল না। কারণ পুরো জমিটা গর্ত। এখন দাম বেড়েছে। আমার ভাই আমার সঙ্গে জালিয়াতি করেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কীভাবে বিক্রি করেছে জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কপি সাব রেজিস্ট্রি অফিসেও দেওয়া আছে। তারপরও কীভাবে দলিল করা হয়েছে তা জানতে বেশ কয়েকবার সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়েছি কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। দলিল লেখকের কাছেও গিয়েছি। কোনো সমাধান না পেয়ে আদালতকে আবার জানিয়েছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
জমির বিক্রেতা আবু হানিফ বলেন, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি বিক্রি করায় আমি ভুল করেছি। আর এ কারণে আমি ঠকেছিও। আমার এমনটা করা ঠিক হয়নি। এখন সমাধান করতে চাই।’
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দলিল রেজিস্ট্রির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মিনতি দাসের কাছে। এজন্য প্রতিবেদকের কাছে এক সপ্তাহের সময় নেন ওই কর্মকর্তা। এরপর যাওয়া হলে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো কথা বলবেন না বলে জানান। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আবার সাব-রেজিস্ট্রার মিনতি দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে এসময় তিনি কোনো কথা বলেননি। বোবার মতো হয়ে চেয়ারে বসে থাকেন তিনি।
এসকে রাসেল/এসআর/জেআইএম