শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম কাপড়ের দাম, বিপাকে ক্রেতারা
‘শীত এলে ফুটপাত থেকে গরম কাপড় কিনি। কিন্তু প্রতিবছর বাড়ছে কাপড়ের দাম। এতে টাকাওয়ালাদের সমস্যা না হলেও আমরা নিম্নবিত্তরা পড়েছি বিপাকে। তবুও কষ্টের টাকা দিয়ে বেশি দামেই শীতের পোশাক কিনতে হচ্ছে।’
ময়মনসিংহ শহরে ফুটপাত থেকে শীতের কাপড় কেনার সময় জাগো নিউজকে কথাগুলো বলছিলেন আম্বিয়া খাতুন। তিনি জানান, তার স্বামী আব্দুল কাদির দিনমজুর। তারা থাকেন ময়মনসিংহ শহরের পরানগঞ্জ এলাকায়। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে যেখানে তাদের খাবার কিনতেই হিমশিম খেতে হয় সেখানে শীতের পোশাক কেনাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
আম্বিয়া খাতুন ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, গতবছর ফুটপাত থেকে সোয়েটার কিনেছি ১৩০ টাকায়। একই সোয়েটার এখন ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীতের অন্যান্য পোশাকের দামও বেশি।
ফুটপাতের পাশের দোকান থেকে জ্যাকেট ও মাফলার কিনছিলেন অটোরিকশাচালক আব্দুল আজিজ। তিনি বলেন, শীত মাত্র শুরু হয়েছে। এখনই বেশি দামে পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে। শীতকে টার্গেট করে অনেক ব্যবসায়ী ইচ্ছা করেই পোশাকের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে।
এদিকে নামিদামি শপিংমলগুলোতেও শীতের পোশাকের দাম বেড়েছে কি না জানতে শহরের নূরজাহান মার্কেট, সূচনা সেন্টার পয়েন্ট, কাজী টাওয়ার, বাড়ী প্লাজা, মফিজ উদ্দিন ইনডেক্স প্লাজাসহ বিভিন্ন শপিংমলে ঘোরা হয়। সেখানে দেখা যায়, থরে থরে সাজানো শীতের পোশাক। তবে ক্রেতার ভিড় নেই। একজন-দুজন করে আসছেন ক্রেতা। এরমধ্যে কেউ কিনছেন, আবার কেউ না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। তবে দাম নিয়ে এখানেও অসন্তুষ্ট বেশিরভাগ ক্রেতা।
বাড়ী প্লাজায় আসাদ ও ফাহাদ নামের দুই বন্ধু ব্লেজার এবং জ্যাকেট কিনছিলেন। তারা জানান, দুজনই একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। গতবছরের চেয়ে এবার বেশিরভাগ শীতের পোশাকের দাম ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যাদের ইনকাম বেশি তারাই শপিংমলে আসেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহখানেক ধরে শপিংমল ও ফুটপাতে শীতের পোশাক বেচাবিক্রি বেড়েছে। তবে বাসাবাড়ি এলাকার ফুটপাত ছাড়াও স্টেশন রোড, ট্রাঙ্ক পট্টি ও মহারাজা রোডের ফুটপাতগুলোতে গরম কাপড়ের বেচাকেনা জমজমাট হয়ে উঠেছে। নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্য আয়ের লোকজন এসব দোকানে সকাল থেকে রাত অবধি ভিড় জমাচ্ছেন। সোয়েটার, উলের পোশাক, ব্লেজার, ট্রাউজার, জ্যাকেট, চাদর, মাফলার, কানটুপিসহ নানা ধরনের শীতবস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে।
ফুটপাতের ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। এখানে স্বল্প আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন শীতবস্ত্র কিনতে ভিড় করছেন। গত বছরের চেয়ে পাইকারিভাবে একটু বেশি দামে কিনতে হয়েছে বলেই খুচরা পর্যায়ে বেশি দামে পোশাক বিক্রি হচ্ছে।
নূরজাহান মার্কেটের ব্যবসায়ী শরিফ আহমেদ বলেন, দোকানে শীতের অনেক পোশাক রেখেছি। তবে এখনো বিক্রি তেমন বাড়েনি। ন্যায্য দামেই বিক্রি হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, ইচ্ছামতো দামে পোশাক বিক্রি করা যাবে না। নির্ধারিত পরিমাণ লাভ করে বিক্রি করতে হবে। অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে কি না; খোঁজখবর নেওয়া হবে। ইচ্ছামতো দামে বিক্রির প্রমাণ মিললে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানার আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, অসহায় শীতার্ত মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ২০০ কম্বল বিতরণ হয়েছে। এ বছর জেলায় ১৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হবে।
কামরুজ্জামান মিন্টু/জেডএইচ/এএসএম