একটি বইও পায়নি শেরপুরের মাদরাসা-কারিগরির শিক্ষার্থীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শেরপুর
প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, ০২ জানুয়ারি ২০২৫
ফাইল ছবি

নতুন শিক্ষাবর্ষে শেরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই পেলেও, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোনো বই পায়নি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি মাধ্যমিকের সব বই। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা কিছু বই পেলেও বছরের প্রথমদিন মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের শিক্ষার্থীরা কোনো নতুন বই পায়নি। এ নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বই আসা মাত্রই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

শেরপুর জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বই ছাপানোয় জটিলতা দেখা দেয়। ফলে শেরপুরে প্রাথমিকের বই পৌঁছেছে ৫৩ শতাংশ। আর মাধ্যমিকে মোট চাহিদার ৪ দশমিক ২ শতাংশ বই গেছে। তবে এখন পর্যন্ত চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোনো বই পৌঁছায়নি।

এই জেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরিতে মোট শিক্ষার্থী ৩ লাখ ৪০ হাজার ২১৬ জন। চলতি শিক্ষাবর্ষে জেলাতে বইয়ের মোট চাহিদা ৩৩ লাখ ৮২ হাজার ৭৩৮ থাকলেও এখন পর্যন্ত বই পৌঁছেছে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ১১৮টি।

এছাড়া জেলার পাঁচ উপজেলাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সব বই এলেও চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বই শেরপুরে যায়নি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, ১ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত শেরপুর সদরে মাধ্যমিক স্কুলে ১০ম শ্রেণির তিনটি বিষয় করে ২২ হাজার ৮০০টি নতুন বই ও সপ্তম শ্রেণির ২৪ হাজার ৩০০টি বই এসেছে।

এরমধ্যে শ্রীবরদী উপজেলায় ১০ম শ্রেণির তিনটি বিষয়ে (বাংলা, গণিত, ইংরেজি) ৯ হাজার ৮৫২টি বই, নকলা উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির তিনটি বিষয়ে (বাংলা, গণিত, ইংরেজি) ১৮ হাজার ৫১৬টি বই, নালিতাবাড়ীতে সপ্তম শ্রেণির ১৯ হাজার ৫০০টি বই, ঝিনাইগাতীতে সপ্তম শ্রেণির ১০ হাজার ২০০টি বই এসেছে। মাধ্যমিকের কোনো শ্রেণিতে পূর্ণাঙ্গ বই তুলে দেওয়া যায়নি বছরের প্রথম দিন।

শেরপুরে মোট ১৪৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবার শিক্ষার্থী ২ লাখ ২১৬ জন। জেলায় ১৮১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ১০৩টি এবং ১৩ কারিগরি প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী ১ লাখ ৪০ হাজার।

শ্রীবরদী উপজেলার স্কুলপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রমিজ মিয়া বলেন, আমার ছেলে এবার ক্লাস ফোরে উঠছে। বছরের প্রথম দিন ছেলেটা বই পেলো না। এতে তার মন খুব খারাপ হয়ে আছে।

অভিভাবক সুলতানা ইসলাম বলেন, আমার মেয়ে এবার দশম শ্রেণিতে উঠেছে। অন্যান্য বার একই বিষয় দুই বছরে শেষ হতো। তবে এবার এক বছরে শেষ করতে হবে। এতে এসএসসি পরীক্ষা কিছুটা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এরপরও নতুন বছরে বই এখনো পৌঁছায়নি।

আরেক অভিভাবক পারভেজ মোশাররফ বলেন, বার বার কারিকুলাম পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে সন্তানদের। শিক্ষাবর্ষের সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি সিলেবাস প্রণয়ন করা হয় তাহলে আমাদের জন্য কিছুটা হলেও সুবিধা হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর যদি বিষয়গুলো গুরুত্ব দেন আমরা উপকৃত হবো।

মাদরাসা শিক্ষক জুবাইদুল হক বলেন, আমরা এখনো বই পাইনি। যার কারণে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বই এসে পৌঁছাবে। বই হাতে পাওয়া মাত্রই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করবো।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লা বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত সব বই এসে পৌঁছায়নি। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোনো বই আমরা পাইনি। এজন্য শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বই এলে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করবো।

এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান বলেন, এ বছর আনুষ্ঠানিকভাবে বই উৎসব হয়নি। আমরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক বই পেয়েছি। আজকেও অনেক বই এসেছে। বই পাওয়া মাত্র প্রতিটি উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ইমরান হাসান রাব্বী/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।