উন্নত জাতের ধান চাষে সর্বস্বান্ত কৃষক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০২:৫৯ পিএম, ০১ জানুয়ারি ২০২৫

উচ্চ ফলনশীল, স্বল্প মেয়াদি, খরাসহিষ্ণু, আলোক সংবেদনশীল ও উন্নত গুণাগুণের বিনাধান-১৭ জাতটিকে ‘গ্রিন সুপার রাইস’ হিসেবেও ডাকা হয়। এ জাতের ধান উদ্ভাবনে পাঁচ বছর গবেষণা করা হয়েছে। ২০১৫ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি জাত হিসেবে সারা দেশে আমন মৌসুমে চাষের জন্য অনুমোদন দেয় জাতটির। এটি চাষাবাদ করে ভালো ফলন পেলেও এ বছর হতাশ হয়েছেন ময়মনসিংহের কৃষকরা।

একই অবস্থা ২০১৩ সালে উদ্ভাবন করা বিনাধান-১১ ধানের। এ জাতটিও চাষাবাদ করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগ ধান চিটা হয়ে গেছে। অনেক কৃষক ধারদেনা করে জাতগুলো চাষাবাদ করেছেন। ধানের ফলনে এখন হতাশ তারা।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১৪১ জন কৃষক এই জাতগুলো চাষাবাদ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আগামীতে এসব ধান চাষ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষক ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।

উন্নত জাতের ধান চাষে সর্বস্বান্ত কৃষক

সরেজমিনে সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যপাড়া এলাকায় দেখা যায়, কৃষক-কৃষাণী মিলে ধান মাড়াই ও শুকাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ক্লান্তিহীনভাবে ধান-চিটা আলাদা করছেন তারা। তবে তাদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ।

কৃষকরা জানান, এই এলাকা ছাড়াও সদরের চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ১৪১ জন কৃষক বিনাধান-১৭ ও বিনাধান-১১ চাষবাদ করে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা সবাই ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা) থেকে বিনামূল্যে বীজ পেয়েছিলেন। বিনাধান-১৭ ও ১১ চাষাবাদ করে প্রতি ১০ শতাংশে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় মণ ধান হয়েছে। বাকি সব চিটা হয়ে গেছে। লাভের পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এই ধানের জাতগুলোর প্রতি ক্ষুব্ধ তারা। আগামীতে এই জাতগুলো চাষাবাদে বহু কৃষকের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় নতুন কোনো জাত চাষাবাদ করতে চাইবে না কৃষকরা।

কৃষক বাবুল মিয়া জানান, মাত্র ৩০ শতাংশ জমির মালিক তিনি। প্রতিবছর এই জমিতে ধান চাষ করেন। কম খরচে বাম্পার ফলনের আশায় স্বল্পমেয়াদি ও উচ্চ ফলনশীল বিনাধান-১৭ আবাদ করেন। কিন্তু চিটা আলাদা করে প্রতি ১০ শতাংশে দেড় মণ করে ধান পাওয়া গেছে। চাষাবাদে তার সবমিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে অন্তত ১২ হাজার টাকা। ভালো ফলনের আশায় ধারদেনা করে চাষাবাদে খরচ করেছিলেন তিনি। ধান বিক্রি করে টাকাগুলো পরিশোধ করার কথা থাকলেও এখন দুশ্চিন্তায় আছেন।

উন্নত জাতের ধান চাষে সর্বস্বান্ত কৃষক

কৃষক হেলাল উদ্দিন একজন বর্গাচাষি। তিনি বলেন, বিনাধান-১৭ এর ১০ কেজি বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল। এগুলো ১২০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ করেছি। আমার বাছুরসহ একটা দুধের গাভি ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে চাষাবাদের খরচ মিটিয়েছি। কিন্তু এখন মোট ১৫ মণ ধান পাওয়া গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু জাগো নিউজকে বলেন, উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত গুণাগুণের এসব জাতগুলো চাষাবাদ করে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মনোবল চাঙা রাখতে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

ধান চিটা হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতগুলোর গবেষক ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিনা) উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামছুন্নাহার বেগম জাগো নিউজকে বলেন, সব এলাকায় ফলন ভালো হলেও শুধুমাত্র ময়মনসিংহের ১৪১ জন কৃষকের বেশিরভাগ ধান চিটা হয়ে গেছে। ধানে ফুল আসার সময় অতিরিক্ত তাপমাত্রা ছিল। এছাড়া সার ও কীটনাশক কম-বেশি দেওয়ার কারণে চিটা হয়েছে। তাদেরকে অন্যান্য ফসলের ধান-বীজসহ সার দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।