সিন্ডিকেটের থাবায় নওগাঁয় ভরা মৌসুমেও চড়া চালের দাম

আরমান হোসেন রুমন আরমান হোসেন রুমন , জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৩:১৩ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁ ধান-চাল উৎপাদনে বরাবরই সমৃদ্ধ। বর্তমানে এ জেলায় চলছে আমনের ভরা মৌসুম। হাট-বাজারে রয়েছে পর্যাপ্ত আমন ধানের সরবরাহ। স্বাভাবিকভাবে এসময় ধান ও চালের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় কথা। তবে চলতি মাসের শুরু থেকেই তার উল্টো চিত্র খুচরা ও পাইকারি বাজারে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে ২-৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৪-৮ টাকা বাড়িয়েছেন জেলার চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

চালের বাজারে আকস্মিক এ অস্থিরতার পেছনে মজুত সিন্ডিকেটকে দুষছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দেশীয় চালের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

শহরের গোস্তহাটির মোড় পৌর চাল বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে গত ২ সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ৪-৮ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ার পর বর্তমানে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৭০-৭৪ টাকা, কাটারীভোগ ৭২-৮০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। এর আগে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৬৫-৬৬ টাকা, কাটারীভোগ ৬৪-৭২ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৪-৫৮ টাকা দরে কেনা-বেচা হয়েছে। বছরজুড়ে ক্রেতাদের ভিড় জমে থাকা বাজারটিতে এখন বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা।

সিন্ডিকেটের থাবায় নওগাঁয় ভরা মৌসুমেও চড়া চালের দাম

পৌর চাল বাজারের তাপশ খাদ্য ভান্ডারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী তাপশ কুমার মন্ডল বলেন, বছরজুড়ে নিম্নবিত্তদের চাহিদার শীর্ষে থাকে স্বর্ণা-৫ জাতের চাল। বিত্তবান ও মধ্যবিত্তদের খাদ্য তালিকায় কাটারীভোগ ও জিরাশাইল চাল সবসময়ই থাকে। এ তিন শ্রেণির মধ্যে বিত্তবানরা সচরাচর খুচরা বাজারে আসেন না। বাকি দুই শ্রেণির ক্রেতা নিয়েই ব্যবসা সচল রাখতে হয়। অথচ তাদের বেশিরভাগই চাল কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। হুট করে প্রতি কেজি চালের দাম ৪-৮ টাকা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভের মুখে চাল না কিনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। বেচাকেনা কমে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

এদিকে শহরের পার নওগাঁ মহল্লার আড়তদারপট্টিতে সরেজমিনে দেখা যায়, এই এলাকার মিলগেট ও আড়তগুলোতে গত ২ সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৫ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ার পর বর্তমানে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৬৯-৭১ টাকা, কাটারীভোগ ৭৪-৮০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৩-৫৪ টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। এর আগে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৬৬-৬৮ টাকা, কাটারীভোগ ৭০-৭৫ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫১-৫২ টাকা দরে কেনা-বেচা হয়েছে।

সিন্ডিকেটের থাবায় নওগাঁয় ভরা মৌসুমেও চড়া চালের দাম

শহরের পার নওগাঁ মহল্লার সততা রাইচ এজেন্সির আড়তদার সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, এ বছর বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। এরপরও গত দুই সপ্তাহ যাবত স্থানীয় হাট-বাজারে বোরো মৌসুমে উৎপাদিত জিরাশাইল ও কাটারীভোগ জাতের ধানের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। যার পুরোটাই সিন্ডিকেটের কারসাজি। ভারত থেকে আমদানিকৃত জিরাশাইল ও কাটারীভোগের চেয়ে দেশীয় চালের মান উন্নত হওয়ায় সংকটকালীন এই মুহূর্তে বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান অবৈধ মজুত রেখে কালো টাকার পাহাড় গড়তে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু চক্র। এদের দমাতে মজুত প্রতিরোধে যে আইন রয়েছে, তা দ্রুত কার্যকর করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জাগো নিউজকে বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ খাদ্য মজুত পরিস্থিতি স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে চাল আমদানি করেও সুফল মিলছে না। তাই চালের বাজারে ক্রমাগত অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। সংকটকালীন এই মুহূর্তে দেশের স্বার্থে অবৈধ মজুতদারদের প্রতি প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।