বাহারের নির্দেশে গুলিতে ঝাঁজরা সাগর, চোখ হারিয়ে আদালতে মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে দেড় শতাধিক ছররা গুলিতে কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় সাগর হোসেন (২১) নামের এক যুবকের পুরো শরীর ঝাঁজরা হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে বাঁ চোখ। এ ঘটনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে কুমিল্লার সাবেক এমপি ও মহাননগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে প্রধান আসামি করে কুমিল্লার আদালতে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৯ নম্বর আমলি আদালতে মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা নামের এক বিএনপি নেতা মামলাটি করেন।
মামলাটি আমলে নিয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক দিদারুল আহমেদ। মামলায় ৬৩ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামাপরিচয় আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী চৌধুরী মোহাম্মদ ফাহাদ সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার বাদী গোলাম মোস্তফা কুমিল্লা সিটি কপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি এবং কুমিল্লা কোটবাড়ি এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী। চোখ হারানো গুলিবিদ্ধ সাগর তার দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তিনি দেবীদ্বার উপজেলার জাফরাবাদ গ্রামের আবদুল মমিনের ছেলে।
মামলায় ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই বাবলুকে। অপর আসামিদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। আর এদের বেশিরভাগই আ ক ম বাহাউদ্দিনের অনুসারী।
আদালত সূত্র জানায়, গত ১৮ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ্বরোডের পূর্ব পাশে কুমিল্লা শহরমুখী সড়কে বিক্ষোভ মিছিল চলছিল। সেখানে অন্যান্য ছাত্র-জনতার মতো সাগরও যোগ দেন। একপর্যায়ে প্রধান আসামির (বাহাউদ্দিন) নির্দেশে মামলার অন্য আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ বৈষম্যবিরোধী নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। দুই নম্বর আসামি তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করেন। এতে গুলি সাগরের বাঁ চোখে, মুখে ও মাথার বিভিন্ন অংশে বিদ্ধ হয়। তিন নম্বর আসামি তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সাগরকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বুক লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এভাবে অন্য আসামিরা সাগরসহ আন্দোলনরতদের ওপর গুলিবর্ষণসহ হামলা চালান।
মামলার বাদি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে সাগর আমার দোকানে কাজ করছে। সেদিন আসামিরা তাকেসহ আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে এভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছিল। আমরা হামলাকারীদের বিচার চাই। সাগরের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ছেলেটার পুরো শরীর ছররা গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে।’
আইনজীবী চৌধুরী মুহাম্মদ আহাদ বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে এফআইআর করতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি, সাগর আদালতে ন্যায়বিচার পাবে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশনাটি এখনো আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। মামলার কপি হাতে পেলে নির্দেশ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/জেআইএম