যশোরে বিক্ষোভ আর কালো পতাকায় রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বরণ!
‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ ঢাকা-বেনাপোল রুটের রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসকে বরণ করলো যশোরবাসী। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে যশোর জংশনে সমাবেশ এবং সন্ধ্যায় ঢাকাগামী রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসে কালো পতাকা বেঁধে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়। মাত্র একটি ট্রেন দিয়ে যশোর ও খুলনাবাসীকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টার প্রতিবাদে উদ্বোধনী দিনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করে বৃহত্তর যশোর জেলা রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু লিংক প্রকল্পে ঢাকা-নড়াইল-খুলনা ও ঢাকা-নড়াইল-যশোর রুটে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রেল চলাচলের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী দিনে মঙ্গলবার সকালে ট্রেনটি খুলনা থেকে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নামে ঢাকায় পৌঁছায়। এরপর রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস নামে ঢাকা থেকে ছেড়ে দুপুরে যশোর হয়ে বেনাপোলে পৌঁছায়। বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে বেনাপোল থেকে ছেড়ে যশোর স্টেশনে পৌঁছায় ৫টা ৪০ মিনিটে। এরপর ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
মাত্র একটি ট্রেন দিয়ে পদ্মা সেতু লিংক প্রকল্পে রেল চালুর প্রতিবাদে এবং পূর্বঘোষিত ছয় দফা দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে যশোর রেলওয়ে জংশনে বিক্ষোভ ও কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি নেয় বৃহত্তর যশোর জেলা রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি। বিকেল সাড়ে ৩টায় যশোর রেলওয়ে জংশনে একই বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, পদ্মা সেতু লিংক প্রজেক্ট উদ্বোধনের ঘোষণায় যশোরবাসী আনন্দিত হতে পারছে না। মাত্র একটি ট্রেন এবং ঘোষিত সময়সূচি যশোরবাসীর মাঝে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে উদ্বোধনী দিন বিক্ষোভ কর্মসূচি, কালো পতাকা প্রদর্শন ও ট্রেনে কালো পতাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে ঢাকা-বেনাপোল রুটে দু’টি ট্রেনসহ পূর্বঘোষিত ছয় দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।
ছয় দফায় দাবিগুলো হলো, দ্রুততম সময়ে যশোর-ঢাকা-পদ্মা সেতু লিংক প্রোজেক্টে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে ২টি ট্রেন চালুসহ দর্শনা-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে ২টি ট্রেন চালু, নিজ শহর থেকে প্রতিদিন ঢাকায় অফিস করার জন্য ট্রেনের সময়সূচি তৈরি করা, আন্তঃনগর ট্রেনে সুলভ বগি যুক্ত করা, ট্রেনের ভাড়া বাস ভাড়া থেকে কম রাখা, ট্রেনের টিকিট প্রাপ্তির সহজ পদ্ধতি চালু করা, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী দিনে প্রতীকী হিসেবে বিক্ষোভ এবং কালো পতাকা প্রদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে এই দাবিসমূহ পূরণ না হলে যশোরবাসী প্রয়োজনে রাজপথ, রেলপথ অবরোধসহ আরও বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।
বৃহত্তর যশোর জেলা রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক জাতীয় হকি দলের ম্যানেজার কাওসার আলীর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন, সদস্য সচিক ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক, জিল্লুর রহমান ভিটু, অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু, ফারাজী সাঈদ আহমেদ বুলবুল, প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা, যশোর আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, দৈনিক লোকসমাজ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ারুল কবির নান্টু, যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক যশোরের সভাপতি অধ্যক্ষ শাহীন ইকবাল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতন, যুগ্ম সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান মিলন প্রমুখ।
সমাবেশ চলাকালে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস যশোর জংশনে পৌঁছায়। এ সময় নেতৃবৃন্দ ট্রেনের লোকোমাস্টারকে ফুল এবং কালোপতাকা প্রদান করেন। এরপর ট্রেনে কালো পতাকা বেঁধে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি যশোর জংশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
মিলন রহমান/এফএ/এএসএম