দিগন্তজুড়ে যেন হলুদের ছোঁয়া
দূর থেকে দেখলে মনে হয় পুরো মাঠ যেন ছেয়ে আছে হলুদের চাদরে। সকালের মিষ্টি সোনা রোদে আরও চকচক করছে সর্ষে হলুদের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। উত্তরের জেলা গাইবান্ধার গ্রামীণ জনপদের ফসলের মাঠগুলো প্রকৃতির অপরূপ রূপে সেজেছে। এখানে এখন পথে-ঘাটে-মাঠে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ, আর বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে শুধুই হলুদ রঙের সমারোহ। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যেন প্রকৃতিপ্রেমীদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধায় চাষিরা বাড়তি ফসল হিসেবে এবার মাঠের পর মাঠ সরিষা চাষ করেছেন। গত বছরের মতো এবারও জেলার সাত উপজেলায় সর্ষের ভালো ফলন হয়েছে। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা খুশি। রাতদিন পরিশ্রম করে তারা এখন ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত। অন্যদিকে কৃষকের ঘরে আমন ধান উঠার পর সর্ষে ক্ষেতগুলোতে মৌমাছির রাজত্ব। মৌমাছিরা উড়ে উড়ে এক ফুল থেকে রেণু সংগ্রহ করে আরেক ফুলে গিয়ে বসছে।
অন্যদিকে সর্ষে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ফসলের মাঠে ভিড় করছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নানা বয়সের নারী-পুরুষ, শিশুসহ বিনোদনপ্রেমীরা। তারা সর্ষে ক্ষেত ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউ আবার সেলফি তুলছেন। বিকেল শুরু হতে না হতেই শীতের কাপড় গায়ে জড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে সরিষার মাঠে ভিড় জমান প্রকৃতিপ্রেমীরা। সরিষা ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে খেতের ভেতর ঢুকে পড়ছেন তারা। এতে দর্শনার্থীদের পায়ের তলে পিষে যাচ্ছে সরিষার খেত। তাই দিনভর খেতের পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে হচ্ছে কৃষকদের।
গাইবান্ধার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৮ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে সর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১৬ হাজার ৫৫৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছর ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল।
আশানুরূপ ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় এবার জেলায় বেড়েছে সরিষার চাষ। এ বছর তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ ছিল না। তাই সর্ষের ফলন ভালো হওয়ায় ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা।
সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, আমন ধান ওঠার পর জমি পড়ে থাকে। তাই বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করেছি। সার, কীটনাশক তেমন লাগে না। এ ফসলে খরচ অনেক কম। এবার কোনো দুর্যোগ ছিল না।
আরেক কৃষক মোসলেম উদ্দিন বলেন, এবার সরিষা আবাদে কোনো রোগবালাই হয় নাই। গাছের ফুল দেখে মনে হচ্ছে ফলন ভালো হবে। বাজারে দাম ভালো থাকলে আশা করি লাভবান হবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধার উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, জেলা কৃষি বিভাগ আধুনিক পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষে কৃষককে পরামর্শ প্রদান ও সহায়তা করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় ১ হাজার ৩৫৪ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ বেশি হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। জেলায় ২৬ হাজার ৮০০ কৃষককে কৃষি পুনর্বাসন ও প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা এবার লাভবান হবেন।
এ এইচ শামীম/জেডএইচ/এমএস