ওয়াজ মাহফিলের জন্য বাড়ি উচ্ছেদ করলো আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন
যশোরে ওয়াজ মাহফিলের দোহাই দিয়ে এক শিক্ষকের বাড়ি উচ্ছেদ করে ৭ শতক জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে আদ্ব-দ্বীন ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে। রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে আদ্ব-দ্বীন কর্তৃপক্ষ।
যশোর শহরতলীর পুলেরহাট এলাকায় ওয়াজ মাহফিলের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে আদ-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজের পেছনের মাঠ। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তিন দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের সুবিধার্থে এই মাঠের একাংশে শিক্ষক শওকত আলীর মালিকানাধীন বাড়ি ও গাছপালাসহ দুটি বাড়ি উচ্ছেদ করে সমান করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক শওকত আলীর স্ত্রী হাফিজা খাতুন দাবি করেন, ২০১২ সালের ১৭ মে তারা যশোর সদরের চাঁচড়া বেড়বাড়ি মৌজায় জালাল উদ্দিনের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর তা কিতাব আলী নামে একজনকে শর্তসাপেক্ষে ভাড়া দেন। পরবর্তীতে ওই জমির পাশে আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন। এরপর থেকে আদ্-দ্বীন কর্তৃপক্ষ সরকারি রাস্তা আটকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি জমি বিক্রির প্রস্তাব দিলেও তারা তা গ্রহণ করেনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের কর্মী হান্নান, আশিক ও রনিসহ ২০-৩০ জন স্কেভেটর ও বুলডোজার নিয়ে তার বাড়িতে যান। এরপর ভাড়াটিয়া কিতাব আলীর হাতে ৩৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি উচ্ছেদ ও গাছপালা কেটে দেন। পরের দিন খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, তার বাড়ির ধ্বংসাবশেষও নেই। এ ঘটনায় তিনি আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের তিন কর্মী এবং ভাড়াটিয়া কিতাব আলী, তার স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ভাড়াটিয়া হালিমা খাতুন বলেন, আদ-দ্বীন হাসপাতাল স্থাপনের পর থেকেই আমাদের জ্বালাতন করে আসছে। তারা সরকারি ম্যাপের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর আদ্-দ্বীনের কর্মী হান্নানের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন এসে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে। এরপর একটা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে ৩৫ হাজার টাকা দেয় মালামাল নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য। এরপর স্কেভেটর দিয়ে গাছ উঠিয়ে জায়গা সমান করে দিয়ে যায়। দিনের আলোয় এই কাজ তারা করেছে এবং সবাই দেখেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান হ্যাপী বলেন, ওই জমির পাশে আমার ৩ শতক জমি আছে। আদ্-দ্বীনের অত্যাচারে তাদের কাছে ১৬ লাখ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। আমাকে দুই এক দিনের মধ্যে এ জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখানে একটি ওয়াজ মাহফিল হবে। ৬-৭ জন বড় বড় বক্তা আসবেন। এ কারণে খাদিজা খাতুনের জমি এবং আরও অপর একটি জমিসহ বাড়ি উচ্ছেদ করে দিয়েছে আদ্-দ্বীন। কিন্তু ওই জমি আদ্-দ্বীন ক্রয় করেনি। এখানে আরও ১৪-১৫টি পরিবার ছিল। আদ্-দ্বীনের অত্যাচারে তারা জমি বিক্রি করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
এ ব্যাপারে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার তরিকুল ইসলাম তারেক সাংবাদিকদের বলেন, খাদিজার জমিটি আমরা দখল করিনি। তার যে ভাড়াটিয়ার কাছে বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি ঘরবাড়ি এবং গাছপালা নিজের দাবি করে স্বেচ্ছায় নিয়ে চলে গেছেন। আমাদের কাছে তিনি লিখিতও দিয়ে গেছেন। আমাদের বড় একটি ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে, সেটিকে বিতর্কিত করতে একটি পক্ষ এই অপপ্রচার শুরু করেছে।
মিলন রহমান/এফএ/জেআইএম