না.গঞ্জে জনসম্মুখে প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বস করালেন এমপি


প্রকাশিত: ০৫:৪৩ পিএম, ১৪ মে ২০১৬

নারায়ণগঞ্জ বন্দরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এবং শিক্ষার্থীকে প্রহার করায় জনগণের রোষানলের শিকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্থানীয় এমপির নির্দেশনায় জনসম্মুখে কান ধরে মুচলেকা দেওয়ার পর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।  

এদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে চাকরিচ্যুত এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামকে বহিস্কার করে নতুন কমিটি গঠন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

শুক্রবার বিকেলে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যানন্দি এলাকায় সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এ নির্দেশ দেন। শনিবার প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বস করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত ৮ মে সকালে স্কুলে আসার পর দশম শ্রেণির তিনজন শিক্ষার্থী স্কুলের ভেতরে একত্রে দাঁড়িয়ে কথা বল ছিলেন। এসময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাদের মধ্য থেকে দশম শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাতকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলার অভিযোগে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারতে থাকে এবং শিক্ষার্থী রিফাতকে ইবলিশ আখ্যা দিয়ে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করতে থাকে। প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বেদম প্রহারের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থী রিফাত জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসীর মাঝে গত ৪ দিন ধরে ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। এদিকে শুক্রবার বেলা ১১টায় এলাকার কয়েক হাজার ধর্মভীরু নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে স্কুলের ভেতরে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় উত্তেজিতরা শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণপিটুনি দিয়ে তার শরীরের জামা কাপড় ছিড়ে ফেলে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় বন্দর থানা পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বন্দর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কালাম স্কুলের ভেতরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেন।

পরে বিকেলে পিআর সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হোন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে ঘটনা জানতে চান। এসময় স্থানীয়রা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধর করাসহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়টি তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যোগ সাজশে স্কুলের ভেতরে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাদের শাস্তি দাবি করেন।

সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান স্থানীয় প্রশাসন ও অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত নিজের অপরাধ স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে কান ধরে মোচলেকা দেন। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোর্পদ করে তাকে পুলিশ হেফাজতে রেখে চিকিৎসা প্রদান করে তাকে স্কুলের আয়-ব্যয়ের অনিয়মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন।

সেই সঙ্গে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্কুল থেকে চাকরিচ্যূত এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামকে কমিটি থেকে বহিস্কার করে নতুন কমিটি গঠন করতে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মৌসুমী হাবিবকে নির্দেশ প্রদান করেন।

শাহাদাত হোসেন/ এমএএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।