সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকা: এ যেন খুলনাবাসীর কাছে আলাদিনের চেরাগ
খুলনার মানুষের বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর। এখন থেকে মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছাতে পারবে খুলনার মানুষ। এতে ৩৭৬ কিলোমিটার থেকে পথ কমে আসবে ২০৮ কিলোমিটারে। এ নিয়ে খুলনার সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।
আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল ৬টায় খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে প্রথমবার ট্রেনটি ছেড়ে যাবে। ঢাকাগামী ট্রেনটির নাম সুন্দরবন এক্সপ্রেস।
আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর আগে গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে যাত্রীবাহী ট্রেন নিয়ে হয় ট্রায়াল রান। বাণিজ্যিক যাত্রা শুরুর আগে সফলভাবেই সম্পন্ন হয় নতুন রুটের পরীক্ষামূলক রেল চলাচল। এবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর থেকে প্রতি সপ্তাহের সোমবার ব্যতীত পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচিতে এই রুটে নিয়মিত ট্রেন চলবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ৮২৫/৮২৬নং জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা-ঢাকা রুটে এবং ৮২৭/৮২৮ নং রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা-বেনাপোল রুটে চলাচল করবে। প্রতিদিন একবার একটি ট্রেন খুলনা থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে বেনাপোল, বেনাপোল থেকে ফের ঢাকা এবং ঢাকা থেকে বিকেলে খুলনায় ফিরবে। প্রতি সপ্তাহে সোমবার বন্ধ থাকবে ট্রেনটি। এই ট্রেনে মোট ৭৬৮টি সিট রয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত ২৫% টিকিট বিক্রয়ের জন্য রাখা হয়েছে। যাত্রী কেউ দাঁড়িয়ে যেতে চাইলে এই টিকিট ক্রয় করতে পারবেন। ট্রেনে খুলনা থেকে ঢাকা যাওয়ার সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৪৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৩৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও জানা যায়, খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটি নওয়াপাড়া, সিংগিয়া, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী, ভাঙ্গা স্টেশন হয়ে যাবে। তবে ট্রেনটি ফেরার পথে কেরানীগঞ্জ স্টেশন হয়ে ফের খুলনায় আসবে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে বেনাপোল যাওয়ার সময় এবং বেনাপোল থেকে ফেরার সময় ট্রেনটি ভাঙা, কাশিয়ানী, নড়াইল, যশোর, ঝিকরগাছা (ক্রসিং) স্টেশন হয়ে যাবে।
টিকিট নিতে আসা চাকরিজীবী আকমল হোসেন বলেন, ঢাকায় ট্রেনে সাড়ে তিন ঘণ্টায় যাওয়ার সুযোগ মানে আলাদিনের চ্যারাগ পাওয়ার মতো। ঢাকায় যেতে মানুষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় বেঁচে যাবে। খুলনাবাসীর জন্য এটা একটা বড় পাওয়া।
শিক্ষার্থী আমিনুর গাজী বলেন, অনেক বৃদ্ধ মানুষ আছেন যাদের বাসে চলাচল করতে কষ্ট হয়। তাদের জন্য এই নতুন পদ্মা রেল লিংকের মাধ্যমে ঢাকায় সাড়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছানোর সুযোগ একটা বড় পাওয়া।
ব্যবসায়ী আকাশ সরকার বলেন, তিন ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানোর সুযোগ খুলনা-যশোরবাসীর একটা বড় পাওয়া। ব্যবসার কাজে অনেক সময় ঢাকায় কিংবা যশোরে যেতে হয় আমার। আগে ঢাকায় যেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। পদ্মা সেতু হলেও বাসে করে ঢাকায় পৌঁছালেও অনেক সময় যানজটের কারণে কালক্ষেপণ হতো। নতুন রুটে ট্রেন চলাচলের কারণে বাসের ওপর থেকেও কিছুটা চাপ কমবে।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বে থাকা সহকারী স্টেশন মাস্টার আল আমিন গোলদার জাগো নিউজকে বলেন, ২৪ ডিসেম্বর থেকে নতুন রুটে ট্রেন চলাচলের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। অনলাইন এবং সরাসরি টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। যাত্রীদের মাঝে ব্যাপক আনন্দ উদ্দীপনাও দেখা যাচ্ছে। আমাদের কাছেও বিষয়টি অনেক ভালো লাগছে।
আরিফুর রহমান/এফএ/জেআইএম