বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে কুমিল্লা জুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।
হেনস্তার শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আব্দুল হাই কানু। তিনি উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একাধিক যুবক ও মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে ধরে আনেন। তার গলায় জুতার মালা পরানো। এ সময় পাশ থেকে একজন বলছেন, তাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে। অপরজন বলছেন, কুমিল্লা থেকে বের হয়ে যেতে।
এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু আকুতি করে বাড়ি থেকে বের হবেন না বললে মধ্যবয়সী ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা এত বছর বাড়িতে থাকতে পেরেছি?’ এসময় আরেকজন বলে ওঠেন, ‘আপনি পুরো গ্রামের মানুষের কাছে মাপ চাইতে পারবেন?’ এসময় তাকে (কানু) হাতজোড় করে সবার কাছে মাফ চাইতে শোনা যায়। একপর্যায়ে তাকে দুই হাত ধরে দুজন ব্যক্তি সামনের দিকে নিয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু স্থানীয় পাতড্ডা বাজারে বাজার করতে বের হন। এসময় স্থানীয় কয়েকজন তাকে ধরে নিয়ে যায় কুলিয়ারা হাইস্কুলের সামনে। সেখানে তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয় এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করেন তারা। এ ঘটনার পর থেকে লোকলজ্জায় গা ঢাকা দিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তবে এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তারাও আত্মগোপনে চলে গেছেন। এদের ধরতে পুলিশ এরইমধ্যে অভিযান শুরু করেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মু. বেলাল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, কোনো মুক্তিযোদ্ধাকেই সামাজিক বা মানসিকভাবে অপমানিত করা জামায়াত সমর্থন করেন না। তবে যতটুকু জেনেছি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে দীর্ঘদিনের। গতকালের ঘটনা কী কারণে, কে বা কারা ঘটিয়েছে আমার জানা নেই। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। আইন হাতে তুলে নেওয়া জামায়াত কোনোভাবেই সমর্থন করে না।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। এরইমধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে আমরা অভিযান শুরু করেছি।
জাহিদ পাটোয়ারী/এফএ/জেআইএম