হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলায় ফিরে এলো শৈশবের উচ্ছ্বাস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৯:২৩ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

চল্লিশ থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রতিযোগীদের যেন উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। সবার চোখ গামছা দিয়ে বাঁধা। প্রায় ৫০ গজ দূরেই তাদের জন্য রাখা মাটির হাঁড়ি। হাঁড়িটি ভাঙার জন্য হাতে দেওয়া হয়েছে বাঁশের লাঠি। বিচারকের বাঁশি শুনেই পর্যায়ক্রমে হাঁড়ির দিকে ছুটছেন চোখবাঁধা প্রতিযোগীরা। অনুমান করে হেঁটে গিয়ে হাঁড়ি ভাঙার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন তারা। অনেকের ব্যর্থতার পর একজন হাঁড়ি ভাঙতেই উল্লাসে ফেটে পড়ছেন দর্শকরা।

শুধু হাঁড়িভাঙা নয়, যশোর সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা গ্রামে হা ডু ডু, হাঁস ধরা, মোরগ লড়াই, বালিশ বদল, তৈলাক্ত কলাগাছে ওঠা, অঙ্ক দৌড়, বস্তার ওপর বসে টানা দৌড়, অন্ধভাবে পথ চলা, মেরুদণ্ডের শক্তি পরীক্ষাসহ ২২টি খেলায় মেতে ওঠেন গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। ছিল ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’র প্রতিযোগিতাও।

হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলায় ফিরে এলো শৈশবের উচ্ছ্বাস

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দিনভর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বলাডাঙ্গা গ্রামের স্থানীয় যুবসমাজ। আনন্দ বিনোদনের গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলায় অংশ নিয়ে অনেকেই যেন ফিরে যান শৈশবে। অতীতের স্মৃতিচারণ করেন অনেকেই। তথ্য প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসা গ্রামীণ ঐতিহ্যের এমন আয়োজন দেখতে আশেপাশের গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের সহস্রাধিক দর্শকের সমাগম হয়।

আকবর ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, এ ধরনের খেলাধুলা এখন আর হয় না গ্রামে। আগে এ ধরনের আয়োজন পাড়ায় পাড়ায় হতো। অনেকদিন পর এসব খেলা করতে পেরে শৈশবে ফিরে গেলাম।

এদিকে এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে গ্রামটির বাড়ি বাড়ি উৎসবের আবহ চলছে। খেলাধুলা দেখতে আত্মীয় স্বজনেরাও এসেছেন বেড়াতে। এমনই একজন কাকলি বেগম। তিনি বলেন, এ ধরনের আয়োজন এখন আর হয় না। শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে এসেছি খেলা দেখতে। ছোটবেলার খেলাধুলায় অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে। খেলায় বয়স যে কোনো বাধা নয়, সেটি আবারও প্রমাণ হলো এই আয়োজনে।

হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলায় ফিরে এলো শৈশবের উচ্ছ্বাস

দীর্ঘদিন পর হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ এসব খেলাধুলা দেখে মুগ্ধ যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এসব খেলাধুলা দেখে শৈশবে ফিরে গেলাম। এখন আর এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন হয় না। তাইতো গ্রামে মানুষের মধ্যে বন্ধন, হৃদ্যতা কমে যাচ্ছে। সামাজিকভাবে বন্ধন অটুট রাখতে এমন আয়োজন বেশি বেশি করা উচিত।’

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ও যশোর সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাগুলোকে আগামী প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতেই এ ধরনের আয়োজন। অন্যদিকে শিশুরা এখন মুঠোফোনের আজব বাক্সে বন্দি। ভুলতে বসেছে গ্রামীণ সব ঐতিহ্য। অনেকেই আবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তরুণ প্রজন্মকে মাঠমুখি করতে এ আয়োজন বলে তিনি জানান। নতুন প্রজন্মের অনেকেই গ্রামীণ খেলার নাম শুনেছে, কখনো দেখা হয়নি তাদের। তাই এমন আয়োজনে তারা ব্যাপক উৎসাহ দেখিয়েছে।

মিলন রহমান/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।