স্পিডবোটে লাইফ জ্যাকেট
দুর্ঘটনা ঘটলেই টনক নড়ে প্রশাসনের
ভোলা জেলার বাংলাবাজার এলাকার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসায়ী শাখাওয়াত হোসেন। ব্যবসায়িক কারণে প্রায় প্রতিনিয়তই দ্রুতগতির স্পিডবোটে যাতায়াত করেন বরিশাল-ভোলা নৌরুটে (বরিশাল-ভেদুরিয়া)। তবে তিনি কখনোই এ রুটে যাত্রীদের জন্য লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা দেখেননি বলে জানান।
ভোলার আরেক যাত্রী জুথি আক্তার বলেন, চাকরির সুবাদে প্রতি সপ্তাহে এই পথে যাতায়াত করতে হয়। তবে দুই প্রান্ত থেকে স্পিডবোট চালকরা কেউ যাত্রীদের জন্য লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা রাখে না। তবে চলতি সপ্তাহ থেকে যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। এতোদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে যাতায়াতে।
একই কথা বলেন এই নৌপথে প্রতিদিন যাতায়াত করা হাজারো যাত্রীরা। তাদের দাবি, চালকরা আগের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়া বাড়িয়েছে, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু যাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ ডিসেম্বর এই রুটে ভোলা থেকে আসা কাগজপত্রবিহীন একটি স্পিডবোট ও একটি বাল্কহেডের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনার পর থেকেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তাদের অভিযানের পর স্পিডবোট চালকরা যাত্রীদের জন্য লাইফ জ্যাকেট দেওয়া শুরু করে। নৌপরিবহণ অধিদপ্তর দুর্ঘটনার কারণ জানতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করে। যা ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা।
তদন্ত কমিটির সদস্য নৌ পরিবহন কর্মকর্তা মিলন ভূঁইয়া বলেন, দুর্ঘটনার কারণ জানতে এরইমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ মাসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে তাতে দুর্ঘটনার শিকার স্পিডবোট ও বাল্কহেডটির বৈধ কোনো কাগজপত্র ছিল না। তাছাড়া স্পিডবোট চালক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিল এবং তার কোনো লাইসেন্স ছিল না।
সচেতন মহল বলছে, বিষয়টি এমন যে, দুর্ঘটনা ঘটলেই সকলের টনক নড়ে। এর আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো খোঁজ থাকে না। প্রতিটি দুর্ঘটনায় একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তারপর সবাই সে বিষয়ে সচেতন হতে শুরু করে।
বরিশাল জেলা স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অহিদুল আলম বলেন, প্রতিটি স্পিডবোটেই যাত্রীদের জন্য লাইফ জ্যাকেট রাখা হয়, কিন্তু তারা পরতে চায় না। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে এখন থেকে লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বরিশাল প্রান্ত থেকে ২৯টি বৈধ স্পিডবোট চলাচল করে। যার বৈধ কাগজপত্রের পাশাপাশি চালকদের লাইসেন্স রয়েছে। এছাড়া যাদের কাগজপত্র এখনো হয়নি সেসব বোট বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কোস্টগার্ড বরিশালের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মতিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বরিশাল প্রান্ত থেকে যে কয়টি স্পিডবোট চলাচল করে মালিকদের কাছে তার প্রত্যেকটির তথ্য চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চালকদেরও তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বরিশাল ঘাটে গিয়ে বোট চালকদের সচেতন করা হয়েছে। যাতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো চালক বোট চালাতে না পারে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশালের যুগ্ম পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কখনোই কাম্য নয়। স্পিডবোট মালিক ও চালকদের সচেতন করা হয়েছে, যাতে কোনো কাগজপত্রবিহীন নৌযান চলাচল না করে। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিত করার জন্যও বলা হয়েছে। এগুলো অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এফএ/এমএস