মৌসুমের শুরুতেই দুই দিবসে বাজিমাত গদখালীর ফুলচাষিদের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ১১:৪৮ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

মহান বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘিরে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীতে প্রায় তিন কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে। গ্রীষ্ম-বর্ষার বৈরিতা পেরিয়ে শীতের অনুকূল আবহাওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই ভালো দাম পেয়ে খুশি ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। গত কয়েকদিনের এই বেচাকেনায় আশায় বুক বেঁধেছেন এই অঞ্চলের সাত হাজার ফুলচাষি। চলতি মৌসুমের (ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল) বিভিন্ন দিবস ঘিরে শত কোটি টাকার ফুলের বাণিজ্যের আশা করছেন তারা।

কৃষি বিভাগ বলছে, আবহাওয়ার এই অনুকূল পরিবেশ এবং বাজার ভালো হলে প্রত্যাশা পূরণ হবে কৃষকদের।

গদখালী অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক মাস ধরেই ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী অঞ্চলে ফুলচাষিদের দম ফেলার ফুরসত নেই। কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি কৃষকরা তাদের ফুলক্ষেত পরিচর্যা করে চলেছেন। এই অঞ্চলে বছরজুড়ে ফুলচাষ হলেও ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচমাস ফুলের ভরা মৌসুম।

গদখালীর ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মৌসুমের শুরুতে ফুলের দামও উঠতে শুরু করেছে। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরেই চাষিরা বিভিন্ন যানবাহনে তাদের উৎপাদিত ফুল নিয়ে আসছেন ফুলের পাইকারি গদখালি বাজারে। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠছে ফুলবাজার। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই ধারে বিভিন্ন জাতের ফুলের পসরা সাজিয়ে পাইকারি ক্রেতাদের অপেক্ষায় থাকছেন কৃষকরা। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল, মোটরসাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দামা-দামিতে ব্যস্ত সময়ও পার করেন। চলতি মৌসুমের শুরুতেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস ঘিরে গদখালিতে প্রায় তিন কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে।

মৌসুমের শুরুতেই দুই দিবসে বাজিমাত গদখালীর ফুলচাষিদের

বাজারের ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিন গদখালী বাজারে প্রতি একশ পিস গোলাপ ও রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, রঙিন গ্লাডিওলাস প্রতি একশ পিস রঙ ও মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১২০০ থেকে দু’হাজার টাকা, জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১৮০০ থেকে দু’হাজার টাকা প্রতি একশ পিস। গাঁদা ফুল প্রতি হাজার বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হয়েছে একশ পিস ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

ঝিকরগাছা উপজেলার কুলিয়া গ্রামের ফুলচাষি শাহ আলম এই দুই দিবসকে ঘিরে জারবেরা ফুল বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় এখন পর্যন্ত ফুলের আবাদ ভালো। এই আবহাওয়া বজায় থাকলে ফুলচাষিরা অতীতের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।

পানিসারা গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান প্রায় ৩০ হাজার টাকার গাঁদা ফুল বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের ফুলের রিং তৈরিতে গাঁদা ফুলের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। ফলে এই দুই দিবস ঘিরে গাঁদা ফুলের দাম বেড়ে যায়। এবার উৎপাদন ও দাম ভালো হওয়ায় তিনি খুশি।

পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুলচাষি আব্দুল হামিদ গোলাপের চাষ করেছেন। তিনি এই দুই দিবস ঘিরে প্রায় ৬০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, এই সময়ে গোলাপের যে দাম পেয়েছেন, তা বেশ ভালো। আগামী দিবসগুলোতেও যদি এমন বাজার পরিস্থিতি ভালো থাকে তাহলে লাভের মুখ দেখবেন ফুলচাষিরা।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে প্রায় ৭ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। তারা অন্তত ১২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে ব্যাপক পরিমাণে ফুল চাষ হয়ে থাকে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেন্ডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। দেশের মোট চাহিদার অন্তত ৭০ ভাগ ফুল সরবরাহ করেন যশোরের গদখালী অঞ্চলের ফুলচাষিরা।

মৌসুমের শুরুতেই দুই দিবসে বাজিমাত গদখালীর ফুলচাষিদের

ফুলচাষিরা জানান, চলতি বছরের গ্রীষ্মে বেশ কয়েকবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে যশোরে। সেইসঙ্গে বর্ষা ঘিরে ছিল অতিবৃষ্টির দাপট। এসব কারণে ফুলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীতে ফুলচাষিদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তারা বর্তমানে ফুলক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, মহান বিজয় দিবস, খ্রিস্টিয় নববর্ষ, বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, মহান স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা নববর্ষ ঘিরে ফুল চাষিরা শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির স্বপ্ন বুনছেন।

যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, এ বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পর অসময়ে বৃষ্টিতে ফুলচাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে খ্রিস্টিয় নববর্ষ, বিজয় দিবস, বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, মহান স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা নববর্ষে ফুলের বাড়তি চাহিদা উপলক্ষে কৃষকরা ফুল চাষ করেছেন। মৌসুমের শুরুতেই বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস ঘিরে গদখালীতে প্রায় তিন কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। আবহাওয়া ও বাজার ভালো থাকায় খুশি চাষিরা। আগামী দিবসগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই অঞ্চলে ফুলের বেচাকেনা শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বছর গ্রীষ্মকালে গরম ও অনাবৃষ্টি এবং বর্ষায় কয়েক দফায় ভারী ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ফুলচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে এখন আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। মৌসুমের শুরুতে হওয়ায় ফুল উঠতে শুরু করেছে। এ কারণে বাজারও বেশ চড়া। গত কয়েক দিনে গদখালীতে ফুল বিক্রির পরিমাণ তিন কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাজার পরিস্থিতিতে খুশি এই অঞ্চলের চাষিরা।

মিলন রহমান/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।