পঞ্চগড়ের কিশোরীকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৬:২৬ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
পঞ্চগড়ের কিশোরী প্রিয়ন্তী রায় প্রমিকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করা হচ্ছে

অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর বিএসএফের হাতে আটক পঞ্চগড়ের কিশোরী প্রিয়ন্তী রায় প্রমিকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমে। এমন মিথ্যাচারের প্রতিবাদসহ নিজেরা বিব্রতবোধ করেছেন খোদ কিশোরীর বাবা-মা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বলছেন, পঞ্চগড়ে তারা শান্তিতে বসবাস করছেন। এই জেলা থেকে কোনো হিন্দু পালিয়ে ভারতে যাননি।

এমন ঘটনা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার উল্লেখ করে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ব্রিফিং করেন পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি।

ভারতে আটক কিশোরী প্রমি পঞ্চগড় জেলা শহরের উত্তর জালাসি পাড়ার জয়দেব চন্দ্র রায় এবং অনুরাধা রাণী রায় দম্পতির বড় মেয়ে।

পঞ্চগড়ের কিশোরীকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার

গত ৯ ডিসেম্বর দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে মামাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে ঢুকে পড়ে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়ন্তী রায় প্রমি। বৈধ ভিসা-পাসপোর্ট না পেয়ে চোখের সমস্যায় ডাক্তার দেখাতে রাতেই আত্মীয়ের বাড়ি যেতে ভারত যায় প্রমি। পরদিন ভোরে অবৈধ অনুপ্রবেশের সময় তাকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার চপড়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। পরে দেশটির আদালতের নির্দেশে তাকে সেফ হোমে নেওয়া হয়।

প্রমির অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর একটি ভিডিও তৈরি করে শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়।

ভিডিওতে কিশোরীর নাম বদলিয়ে প্রচার করা হয়, পঞ্চগড়ের ‘অর্পিতার পরিবার ইসকন ভক্ত। তারা বাবা ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। প্যারালাইজড রোগী। মা খুবই অসুস্থ। তারা আসতে পারবে না। বাংলাদেশ তাদের জন্য অনিরাপদ। তাই ওই নাবালিকাকে নিরাপদের জন্য ভারতের আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তবে ওই ভিডিওতে কিশোরীর কোনো বক্তব্য ছিল না।

পঞ্চগড়ের কিশোরীকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার

পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তের পর পুলিশ জানায়, দেশের বিরুদ্ধে গুজব ও বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে। ভারতের মিডিয়া অপপ্রচার চালিয়ে, গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করছে।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রমির বাবা কিছুদিন আগে স্ট্রোক করলেও বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন। ভারতে মেয়েটি কীভাবে ভারতে গেলো সে বিষয়ে কিছু জানে না পরিবার। তবে প্রমির পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশে নিরাপদে আছেন এবং ভালো আছেন। তবে মেয়েকে ফেরত পেতে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন প্রমির বাবা মা।

প্রমির মা অনুরাধা রাণী রায় বলেন, ‘গত সোমবার আমার মেয়ে আমাদের কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। তবে ভারতে সে কীভাবে গেলো জানি না। আমি আমার মেয়েকে আমার কাছে ফেরত চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী কিছুদিন আগে দুবার স্ট্রোক করেছে। তবে বর্তমানে সুস্থ। মেয়েরও চোখের সমস্যা। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় চিকিৎসক দেখাতে পারছি না। রোববার সকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসেছি। আমরা মেয়েকে ফেরত চাই।’

প্রমির বাবা জয়দেব চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার মেয়ের চোখের সমস্যা। একবার তাকে চিকিৎসক দেখিয়েছিলাম। আবারও তাকে চিকিৎসক দেখানোর দরকার ছিল। কিন্তু ভিসা পাইনি। এখন দেখছি, ভারতে সে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছে। এখন নাকি সেখানে সেফ হোমে আছে।’

পঞ্চগড়ের কিশোরীকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে আমাদের ওপর কোনো ধরনের নির্যাতন কিংবা অত্যাচারের ঘটনা ঘটেনি। ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে। কে বা কারা এসব করছে জানি না। আমার মেয়ে তো অত্যাচারের শিকার হয়নি বা এমন কোনো কথা বলেনি সেখানে। তবে সেখানকার সাংবাদিকরা মিথ্যাচার করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

পঞ্চগড় সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন রায় বণিক। তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে আমরা সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করছি। কিন্তু পঞ্চগড়ের জালাসী এলাকার এক কিশোরী অবৈধ উপায়ে ভারতে গেছে। এটা নিয়ে সেখানকার গণমাধ্যম মিথ্যাচার করছে। পঞ্চগড়ে কোনো হিন্দুর ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনাই ঘটেনি। কেউ পালিয়ে ভারতে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।’

পঞ্চগড়ের কিশোরীকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পরে আমি প্রমির বাড়িতে পুলিশ পাঠাই। সেখানে গিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের কোনো সত্যতা মেলেনি। আমরা তাদের এই মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার মোটেই কাম্য নয়। এখন তার বাবা-মা শোকে কাতর।’

সফিকুল আলম/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।