অযত্ন-অবহেলায় বেহাল তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
অযত্ন-অবহেলায় বেহাল খুলনার তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জনবল সংকটতো রয়েছেই। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে রোগী ও তার স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ১৭৪টি পদের মধ্যে ৮০টি পদ শূন্য রয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য আউটর্সোসিং কর্মচারী থাকলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার যথাযথ তদারকির অভাবে সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মহিলা ওয়ার্ডের শৌচাগারের দরজা খুলে রয়েছে। শৌচাগারে গেলে দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা হয়। পুরুষ ওয়ার্ডের অবস্থা আরও নাজুক। রোগীর কেবিন, টয়লেট, বারান্দা, প্রতিটি কক্ষ নোংরা পরিবেশ। হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজের নাজুক পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
অভিযোগে এক ভুক্তভোগী বলেন, নাগরিকের ট্যাক্সের ঢাকার একটি অংশ হলো সরকারি চিকিৎসা সেবা দেওয়া। কিন্তু নামে মাত্র চিকিৎসাসেবা চলছে তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি। সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এসে বেতন নেয়ার জন্য দায় সাড়া ভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করেন।
জানা যায়, বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগ মিলে প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৪০০ জন মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। মূল ফটক পেরিয়ে হাসপাতালটিতে ঢুকলেই দেখা যায় প্রতিটি সিঁড়ি ও মেঝেতে ধুলার স্তর পড়ে রয়েছে। অনেকটা একই অবস্থা ওয়ার্ডের ভিতরেও। ময়লা ঠিকমতো পরিষ্কার না করায় চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেখান থেকে উড়ছে মশা-মাছি। শৌচাগারের ভেতর স্যাঁতস্যাঁতে শৌচাগারগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে রোগীরা পড়েন বিড়ম্বনায়। রোগী ও স্বজনদের দাবি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদাসীন।
চিকিৎসা নিতে আসা তসলিমা আক্তার বলেন, হাসপাতালে মানুষ আসে সুস্থ হতে। কিন্তু এখানকার পরিবেশে উলটো অসুস্থ হওয়ার দশা হয়েছে। কোনো কিছু ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। বাথরুমে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে।
চিকিৎসা নিতে আসা হামিদ মিয়া বলেন, আমাদের কোনো রোগ-বালাই হলে বাড়ির কাছে এ হাসপাতালে আসি। কিন্তু সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির কোন যত্ন নাই। যারা আছেন, সবাই উদাসীন। আমাদের এখানে আসার ইচ্ছা না থাকলেও বাধ্য হয়ে আসতে হয়। কর্তৃপক্ষের উচিত সরাসরি এসে দেখা। তারপর তারা ব্যবস্থা নিক।
তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডা. তানিয়া রহমান বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের ২৯টি পদ থাকলেও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি আমরা মাত্র ৯ জন। ১১ জন থাকলেও দুজন চিকিৎসক ডেপুটেশনে আছেন।
তিনি বলেন, হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতে পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রয়োজন। কিন্তু সে জনবল নেই। এর ভিতর থেকেই আমরা চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।
খুলনার সিভিল সার্জন শফিকুল ইসলাম বলেন, তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। জনবল সংকটের কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতার জন্য আলাদাভাবে জনবল নেই বলেই সমস্যা হচ্ছে। খুব শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো. আরিফুর রহমান/আরএইচ/জিকেএস