চালু হলো শিববাড়ী-ঢাকা রুটে বিআরটি প্রকল্প
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) পরিচালনায় শুরু হলো শিববাড়ী-ঢাকা-গাজীপুর বিআরটি লেনে বিআরটিসি এসি বাস চলাচল। একইসঙ্গে গাজীপুর-ঢাকা রেল রুটে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করা হয়েছে।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে এ সার্ভিস দুটির উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সকাল সাড়ে ছয়টায় জয়দেবপুর রেল জংশনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম, বাংলাদেশের রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন।
এদিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে উপদেষ্টা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) পরিচালনায় ঢাকা থেকে শিববাড়ী, গাজীপুর বিআরটি লেনে বিআরটিসি এসি বাস চলাচল উদ্বোধন করেন। শহরের শিববাড়ী বিআরটি স্টেশনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ’র মহাপরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান, বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. ইব্রাহিম খান প্রমুখ।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, কাজ শেষ হয়নি, তারপরও এটি উদ্বোধন করার কারণ হচ্ছে মানুষের কিছুটা হলেও যাতায়াতের সুবিধা হবে।
তিনি বলেন, বিআরটি একটি রুগ্ন প্রকল্প, সেটা আমরা আগে থেকেই জানি। অনেকবার সময় বাড়ানো হয়েছে তারপরও কাজ শেষ করতে পারেনি। এই প্রকল্প মানুষের কোনো উপকারে আসছিল না। তাই প্রাথমিকভাবে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে বিআরটি লেনে ১০টি বিআরটিসি বাস দিয়ে এই জাতির সেবা চালু করা হয়েছে। বিআরটি লেনের বাকি কাজগুলো পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে এবং অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনিহা প্রকাশ করায় মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে আরও দশটি নতুন ফুটওভার ব্রিজসহ অন্যান্য কাজগুলি সম্পন্ন করা হবে। বিআরটি লেনে বিশেষ বাসের জন্য এরইমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সেগুলো আসলে আরও বেশি যাত্রী চলাচল করতে পারবে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা ভবিষ্যতে বিআরটি লেনের বাসগুলো ইলেকট্রিক লাইনে চলাচলের ব্যবস্থা করবো, এছাড়া ট্রেন গেলেও ইলেকট্রিক লাইন দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ১০টি বিআরটিসি এসি বাস গাজীপুরের শিববাড়ী বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) টার্মিনাল থেকে বিআরটি লেনে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মোট ৪২ দশমিক ৫ কিলোমিটার পথ চলাচল করবে।
শিববাড়ী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া ৭০ টাকা এবং শিববাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়া ১৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যাত্রী চাহিদা এবং স্টেশনগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাসের সংখ্যা পরে বাড়ানো হবে। বিআরটি করিডোর দিয়ে বিআরটিসির এসি বাসগুলো চলাচল করবে।
অপরদিকে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনের সময় উপদেষ্টা বলেন, গাজীপুর থেকে যে সকল যাত্রী ঢাকায় গিয়ে অফিস করে থাকেন তাদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দুই জোড়া কম্পিউটার ট্রেন চালু করা হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা-নরসিংদী, নরসিংদী-ঢাকা এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে আরও কমিউটার ট্রেন চালু করা হবে। যাত্রীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে এখন থেকে এই দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে। যারা ঢাকা থেকে গাজীপুর অথবা গাজীপুর থেকে ঢাকায় গিয়ে নিয়মিত অফিস করে থাকেন তাদের জন্য এ সার্ভিসটি অনেক স্বস্তিদায়ক হবে। এতে গাজীপুর থেকে ঢাকায় এসে সহজেই অফিস করতে পারবেন যাত্রীরা।
ট্রেন চলাচলের সময়সূচি সম্পর্কে জানানো হয়েছে, তুরাগ কমিউটার-১ ট্রেন ভোর ৫টায় ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে সকাল ৬টায় জয়দেবপুর পৌঁছাবে। ট্রেনটি ঢাকা বিমানবন্দর ও টঙ্গী স্টেশনে থামবে।
জয়দেবপুর কমিউটার-১ ট্রেনটি ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে জয়দেবপুর স্টেশনে সকাল ৬টা ২৫ মিনিটে পৌঁছাবে। ট্রেনটি তেজগাঁও, ঢাকা বিমানবন্দর ও টঙ্গী স্টেশনে থামবে।
তুরাগ কমিউটার-২ ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশন থেকে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে ঢাকা স্টেশনে ৭টা ৪০ মিনিটে পৌঁছাবে। ট্রেনটি তেজগাঁও, বনানী, ঢাকা বিমানবন্দর, টঙ্গী ও ধীরাশ্রমে থামবে।
জয়দেবপুর কমিউটার-২ ট্রেনটি জয়দেবপুর থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে ছেড়ে সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। জয়দেবপুর কমিউটার-৩ ট্রেনটি ঢাকা থেকে বেলা ১১টায় যাত্রা শুরু করে দুপুর ১২টায় জয়দেবপুর পৌঁছাবে। জয়দেবপুর কমিউটার-৪ ট্রেনটি জয়দেবপুর থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় যাত্রা শুরু করে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। ট্রেনগুলো তেজগাঁও, বনানী, ঢাকা বিমানবন্দর, টঙ্গী স্টেশনে থামবে।
তুরাগ কমিউটার-৩ ট্রেনটি ঢাকা থেকে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে জয়দেবপুর পৌঁছাবে। তেজগাঁও, বনানী, ঢাকা বিমানবন্দর, টঙ্গী, ধীরশ্রম স্টেশনে থামবে।
তুরাগ কমিউটার-৪ ট্রেনটি জয়দেবপুর থেকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করে রাত ১১টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে।
তুরাগ কমিউটার শুক্রবার এবং জয়দেবপুর কমিউটার শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে। সংশ্লিষ্ট স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকিট ইস্যু করা হবে বলেও জানানো হয়। ট্রেনটি তেজগাঁও, ঢাকা বিমানবন্দর, টঙ্গী স্টেশনে থামবে।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/এমএস